কলকাতার বাতাসে ধুলোর পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। যা বাতাসকে আরও বেশি করে দূষিত করে তুলছে — সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। মহানগরের বাতাসের পরিস্থিতি জানতে ‘দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট’ (টেরি) নামে একটি সংস্থাকে সমীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। ওই সংস্থা সমীক্ষা শেষে যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে শহরে বায়ুদূষণের সবথেকে বড় কারণ হিসেবে ধুলোকেই দায়ী করা হয়েছে।
এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না–হলে আগামী দিনে শহরে দূষণজনিত রোগ আরও বাড়বে বলেই জানিয়েছে ওই সংস্থা। যদিও কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দারের দাবি, ‘শহরের দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হট স্পট চিহ্নিত করে সেখানে গ্রিন জ়োন তৈরি করা হয়েছে। যত্রতত্র বর্জ্যে আগুন লাগার উপরেও রাশ টানা হয়েছে।’
টেরির বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মহানগরের বাতাসে ধুলোর পরিমাণ বাড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম কণা (পিএম১০) এবং অতিসূক্ষ্ম কণা (পিএম২.৫) বাড়ছে ক্রমশ। সেই সঙ্গে পরিবেশবিধি না–মেনে নির্মাণ, যেখানে–সেখানে বর্জ্য পোড়ানো, যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার অভ্যেস এবং ডাম্পিং গ্রাউন্ডে মাঝেমধ্যে আগুন লেগে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। একই সঙ্গে শহরের যে সব রাস্তায় যানজট হয় বেশি এবং যে সব জায়গার ফুটপাথে উনুন জ্বালিয়ে রান্না হয় সেখানকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বাকি জায়গার তুলনায় ৩০–৪০ শতাংশ বেশি বলে দাবি করা হয়েছে সমীক্ষায়।
পর্ষদ সূত্রে খবর, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ সালের শহরের একাধিক জায়গায় সমীক্ষা চালিয়েছে এই সংস্থাটি। সেই সমীক্ষাতেই উঠে এসেছে, শীতের পাশাপাশি গ্রীষ্মেও দূষণের পরিমাণ বেড়েছে শহরে। ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক রাজা ধর বলেন,‘শহরের বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ছে বলেই দূষণজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দুষণের কারণেই শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরীর পরামর্শ, ‘কলকাতার বাতাসে ধুলোর পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ চারপাশ না ঢেকে নির্মাণ। নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশবিধি মানলে বাতাসে বিষের পরিমাণ অনেকটাই ঠেকানো যাবে।’
কী পদক্ষেপ করছে প্রশাসন? পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের বাতাসের মান ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ২০১৯ সালে ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৬ সালের মধ্যে কলকাতার বাতাস থেকে পিএম১০-এর মাত্রা অন্তত ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনার টার্গেট রয়েছে।
সেই প্রকল্পে পাওয়া অর্থ ঠিক ভাবে কাজে লাগালে পরিস্থিতি উন্নত হবে বলে দাবি করছেন পরিবেশকর্মীরা। এ প্রসঙ্গে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক অফিসার বলেন, ‘দূষণের উৎস খোঁজার জন্যই সমীক্ষা করানো হয়। যে যে কারণে দূষণ বাড়ছে তা পুরসভাকে জানানো হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সবরকম ভাবে সাহায্য করব।’