রাজ্যপালের জঙ্গিপুর পরিদর্শনে সংশয়! বহরমপুরে মহিলা কমিশন, আসছে মানবাধিকার কমিশনও
আনন্দবাজার | ১৮ এপ্রিল ২০২৫
শুক্রবার বিকেলেই মালদহের বৈষ্ণবনগরে গিয়ে মুর্শিদাবাদে হিংসায় ঘরছাড়া পরিবারগুলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। রাজভবন সূত্রের খবর, দুপুরে ট্রেনে মালদহ পৌঁছবেন তিনি। এর পরে সড়কপথে যাবেন বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর স্কুলের ত্রাণশিবিরে।
অন্য দিকে, শুক্রবার দুপুরে পারলালপুর স্কুলে গিয়ে ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। পাশাপাশি, জাতীয় মহিলা কমিশনের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শুক্রবারই বহরমপুরে গিয়েছে। বিকেলে মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা শমসেরগঞ্জ থানায় অন্তর্গত ধুলিয়ানের জাফরাবাদে গিয়ে নিহত হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আবহে গত শুক্রবার অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, সুতি, শমসেরগঞ্জ-সহ কিছু অঞ্চলে। সেই গোলমালে তিন জন নিহত হন। ঘটনার তদন্তে বুধবার সিট গঠন করেছে পুলিশ। এই আবহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সাড়া না দিয়েই শুক্রবার সকালে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন রাজ্যপাল। বৃহস্পতিবার ‘ঘরছাড়া’দের মুখে এলাকার কথা শুনে তাঁর এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে আবহাওয়া খারাপ থাকায় রাজ্যপাল কখন জঙ্গিপুর পরিদর্শনে যাবেন, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। মালদহে রাত্রিবাসের পরে শনিবার জঙ্গিপুরে যেতে পারেন বলে প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে। কিন্তু আবহাওয়ার ঝড়-বৃষ্টির কারণে কিছুটা রদবদল হতে পারে সফরসূচিতে।
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ ঘিরে অশান্তির জেরে সাময়িক ভাবে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হলেও গত ৪৮ ঘণ্টায় মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রশাসনের উদ্যোগে দ্রুত বদলাচ্ছে পরিস্থিতি। স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জনজীবন। ঠিক এই আবহে শুক্রবার মুর্শিদাবাদের অশান্তি কবলিত এলাকায় আসছেন রাজ্যপাল বোস। জঙ্গিপুর মহকুমার উপদ্রুত এলাকাগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেখানে যাচ্ছেন তিনি, এমনটাই সূত্রের খবর। এর পাশাপাশি জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দলের শুক্রবার যাওয়ার কথা রয়েছে মালদহে। সেখানকার ত্রাণশিবিরগুলোতে যাওয়ার কথা রয়েছে মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিদের। অশান্তির সময়ে মহিলাদের নিরাপত্তায় পুলিশের ভূমিকা ঠিক কী ছিল, এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট সংগ্রহ করবেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। পাশাপাশি, বেতবোনা, দাসপাড়া, ঘোষপাড়া, জাফরাবাদ-সহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলবেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা।
অন্য দিকে, অশান্তি কবলিত এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিক করার পাশাপাশি ঘরছাড়া পরিবারগুলিকে ঘরে ফেরাতে বিশেষও উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও দোকানের তালিকা প্রস্তুত করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হচ্ছে সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরির কাজ। এই আবহে রাজ্যপালের কর্মসূচির নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি সতর্ক প্রশাসন। প্রস্তুতি থাকলেও রাজ্যপাল যে শুক্রবারই জঙ্গিপুরে আসছেন, এ বিষয়ে রাজভবনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত কিছু জানানো হয়নি বলে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। তবে ধুলিয়ানের হিংসা কবলিত এলাকায় শুক্রবার সকালে মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি বাহিনী। ঘনঘন টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি।
‘বিশেষ দায়িত্বে’ থাকা রাজ্য পুলিশের আধিকারিকরা সকাল থেকে বার কয়েক পরিদর্শন করেছেন ধুলিয়ান ও সুতির বেশ কিছু জায়গা। জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক (এসডিও) একাম জে সিংহ বলেন, ‘‘শমশেরগঞ্জের বেতবোনা, দাসপাড়া, ঘোষপাড়া, জাফরাবাদ-সহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর পাশে প্রশাসন সর্বতো ভাবে থাকার চেষ্টা করছে। বন্ধ দোকানগুলি খোলার ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে। যাঁদের দোকানে ভাঙচুর হয়েছে, তাঁদের পাশেও দাঁড়ানো হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির তালিকা তৈরি করা হবে।’’