• ভবঘুরের ঝোলায় মিলল সদ্যোজাত, কঠিন রোগে আক্রান্ত জেনেই ফেলে দিয়েছে পরিবার, উঠছে প্রশ্ন
    বর্তমান | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: এক ভবঘুরের ঝোলা থেকে সদ্যোজাত শিশু উদ্ধারে শুক্রবার দুপুরে শিলিগুড়িতে চাঞ্চল্য ছড়ায়। শুক্রবার দুপুরে শহরের মাল্লাগুড়িতে এক ভবঘুরে রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে গিয়ে বসে। দোকানিকে বলে, তার ঝোলায় বাচ্চা রয়েছে। সামনেই পুলিস ছিল। চা দোকানি সঙ্গে সঙ্গে পুলিসকে বিষয়টি জানান। পুলিস গিয়ে  সেই ঝোলা খুলে দেখে, সত্যি সত্যি ঝোলার মধ্যে জীবিত এক সদ্যজাত কন্যা সন্তান রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সেই ভবঘুরেকে আটক করে পুলিস। সদ্যজাত শিশুকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। ততক্ষণে গোটা শহরে শিশু উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। শিলিগুড়ি জেরা হাসপাতালে ভিড় উপচে পড়ে ওই শিশু দেখার জন্য।

    ভবঘুরের দাবি, মাটিগাড়া এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে জঞ্জালের স্তূপ থেকে এদিন শিশুকে সে ব্যাগে ভরা অবস্থায় কুড়িয়ে পেয়েছে। তার এই দাবিতে এই শিশু উদ্ধারের ঘটনায় নানা প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে। অনেকে মনে করছেন, সেই নার্সিংহোম থেকে পূর্বপরিকল্পনা মতো এই শিশুকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। শিশুকে পরীক্ষার শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। শিশুর পরীক্ষার রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে এই পরিকরল্পিতভাবে শিশু ফেলে দেওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয় বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ চন্দন ঘোষ বলেন, একদিন আগে জন্ম নেওয়া এক কন্যাসন্তানকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এদিন পুলিস আমাদের হাসপাতালে এনেছিল। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন, হাইড্রো সেফেলাস রোগে আক্রান্ত ওই শিশু। মায়ের গর্ভেই শিশুর মাথায় জল জমেছিল। মাথাটি ফোলা। এধরনের গুরুতর অসুস্থ শিশুর অবিলম্বে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন রয়েছে। সেই কঠিন অস্ত্রোপাচারের পরিকাঠামো উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। নিকু-তে রেখে তার চিকিৎসা করতে হবে। সে কারণেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুকে রেফার করা হয়েছে। শিলিগুড়ি হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন ও অন্যান্য লাইফসাপোর্ট সহ অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। 

    চিকিৎসক ও ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের বক্তব্য, গর্ভে থাকার সময়ই পরিবারের লোকেরা পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পেরেছিল, তাদের শিশুর এই ত্রুটি রয়েছে। জন্মের পর তাকে বাঁচানো কঠিন হতে পারে। সে আশঙ্কায় তারা সদ্যজাতোকে ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছে। যা নির্মমতার উদাহরণ। 

    এদিকে ওই ভবঘুরে নিজের নাম শঙ্কর বলে দাবি করেছে। দেখে সকলেরই তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়েছে। ভবঘুরে বলে, আমি মাটিগাড়ায় একটি নার্সিংহোমের সামনে জঞ্জালের স্তূপে এদিন ব্যাগের মধ্যে ওই বাচ্চা পেয়েছি। আমি বাঁচানোর জন্য তাকে তুলেছিলাম। যদিও তাঁর এই কথা পুলিস এখনই পুরোপুরি বিশ্বাস করছে না।

    শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের ডিসিপি(পশ্চিম) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, ওই ভবঘুরেকে আমরা আটক করেছি। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)