নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: আসানসোল শিল্পাঞ্চলের অন্যতম বড় হাসপাতাল বার্নপুর হাসপাতাল। ইস্কোর এই হাসপাতালে চিকিৎসা পান ইস্কোর বর্তমান ও প্রাক্তন শ্রমিকরা। সেই হাসপাতালেই রোগী পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। সৌজন্যে চোরের উপদ্রব। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, কপার চোরেদের তাণ্ডব। যেসব পাইপে ও তারে তামা থাকছে, সেগুলিকেই টার্গেট করছে চোররা। এবার হাসপাতালের অক্সিজেন প্ল্যান্টের পাইপ কেটে নিয়েছে তারা। যার জেরে বুধবার রাত থেকে রোগীর বেডে অক্সিজেন না পৌঁছনোয় চাঞ্চল্য ছড়ায়। ঘটনার পর হীরাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ইস্কো।
যদিও শ্রমিক নেতাদের দাবি, সর্ষের মধ্যে ভূত আছে। হাসপাতালজুড়ে ঘুঘুর বাসা। বারবার বলা সত্ত্বেও হাসপাতালের নিরাপত্তায় সিআইএসএফ মোতায়েন করা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরাও লাগানো হয়নি। তাঁদের অভিযোগ, সামগ্রী চুরির পাশাপাশি তালিকা অনুযায়ী রোগীদের খাবার দেওয়া হয় না। বৃহৎ এলাকাজুড়ে থাকা ইস্কোর হাসপাতাল ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ। জানা গিয়েছে, ৩৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে ইস্কোর সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন করে কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। সেক্ষেত্রে, ইস্কোর নিজস্ব বার্নপুর হাসপাতালেরও ব্যাপক উন্নয়ন হওয়াই স্বাভাবিক। এদিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, কয়েকটি নতুন ওয়ার্ড গড়ে তোলার কাজ চলছে। বেশকিছু জায়গায় মারবেল ফ্লোর টাইলস বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু অন্দরে খোঁজ নিলে দেখা যায়, স্বাস্থ্য পরিষেবার কঙ্কালসার দশা সামনে এসেছে। বিশাল এলাকাজুড়ে হাসপাতাল থাকলেও নিরাপত্তারক্ষী মাত্র দু’জন। তাও তাঁদের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবকে কাজে লাগিয়ে হাসপাতাল চত্বরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চোর। বুধবার রাতে তারা হানা দেয় হাসপাতালের অক্সিজেন প্ল্যান্টে। যেখান থেকে বিভিন্ন বেডে অক্সিজেন সরবরাহ হয়। পাইপ কেটে নেওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় অক্সিজেন পরিষেবা। শোরগোল পড়ে যায় হাসপাতালে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, দু’জন নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে কীভাবে এই বিশাল হাসপাতাল চত্বর পাহারা দেওয়া সম্ভব? তাই মাঝেমধ্যেই চুরি হচ্ছে। নতুন ওয়ার্ডে এসি মেশিনের তারও চুরি হয়ে গিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা বিভাগের এক কর্মী বলেন, আমাদের এই জরুরি বিভাগেও মাত্র দু’জন স্থায়ী কর্মী রয়েছেন। হাসপাতালকে ধীরেধীরে কোমায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ডিসি সন্দীপ কাররা বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইস্কোর জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার বলেন, চুরির ঘটনা ঘটেছে। আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।
ইস্কোর আইএনটিইউসির বর্ষীয়ান নেতা হরজিৎ সিং বলেন, সেইল কর্তৃপক্ষ আর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে চায় না। তাই যতরকমের অরাজকতা করা সম্ভব, তা হচ্ছে। আমরা বারবার দাবি জানানোর পরও কেন হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়নি? বাইরে থেকে চোর এসে তো পাইপ চুরি করছে। রোগীদের খাবার কারা চুরি করছে? এখানে সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। সিটু নেতা সৌরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ইচ্ছা করেই ইস্কোর হাসপাতাল নিয়ে গা-ছাড়া মনোভাব কর্তৃপক্ষের। তাই এই দশা। হাসপাতালে স্থায়ী কোনও লোক নিয়োগ হচ্ছে না। চিকিৎসক নিয়োগ করা হচ্ছে না। চোরেরাও কর্তৃপক্ষের অবহেলার সুযোগ নিচ্ছে।-নিজস্ব চিত্র