• কঙ্গোয় মানবতা রক্ষা ও জঙ্গি মোকাবিলায় বঙ্গ সন্তানের কৃতিত্বকে কুর্নিশ রাষ্ট্রসঙ্ঘের
    বর্তমান | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • অগ্নিভ ভৌমিক, কৃষ্ণগঞ্জ: বারবার যুদ্ধে দীর্ণ মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো দেশে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব সামলে রাষ্ট্রসঙ্ঘ থেকে সম্মানিত হলেন নদীয়ার অরুনাভ মুখোপাধ্যায়।‌ গত এক বছর ধরে সে দেশের বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করে চলেছেন। সুরক্ষা দিতে গিয়ে বন্দুক হাতে লড়াইও করতে হয়েছে অরুনাভকে। বঙ্গ সন্তানের এই বীর বিক্রমে পিছু হটতে বাধ্য হয়ে কঙ্গোর জঙ্গী গোষ্ঠীকে। রাষ্ট্রসংঘের শান্তিররক্ষা মিশন বা ‘মনুস্ক’র অংশ হিসেবে বিশেষ দলের সঙ্গে গিয়েছিলেন অরুণাভ। কঙ্গোর সঙ্কটাপন্ন মানবতাকে রক্ষার গুরুদায়িত্ব বর্তে ছিল তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনীর কাঁধে। বাঙালি যুবকের সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। ‘পিস কিপিং’ মেডেল দেওয়া হয়েছে অরুনাভবাবুকে। তাঁকে নিয়ে গর্বিত জেলাবাসী। 

    কঙ্গোয় কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে এখনও অবিচল অরুণাভ। শুক্রবার ফোনে বলছিলেন, ‘আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। কঙ্গো দেশের সর্বস্তরের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাঁদের কাছে ন্যূনতম মানবাধিকারে বিষয়গুলি পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি।। যার মধ্যে অন্যতম হল খাবার ও ওষুধ। একবছর ধরে এই কাজ চলছে। তার জন্যই আমাকে পিস কিপিং মেডেল দেওয়া হয়েছে। সম্মান পেয়ে আমি আপ্লুত।’

    অরুণাভ বর্তমানে বিএসএফের হেড কনস্টেবল পদে কর্মরত। বাড়ি নদীয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের শিবনিবাসে। বাবা অমিতাভ মুখোপাধ্যায় বিএসএফের অবসরপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর। অরুণাভর পোস্টিং ছিল দিল্লিতে। ২০২৪ সালের মে মাসে রাষ্ট্রসংঘের তরফে ভারতের ২১ জন‌ মহিলা সহ ১৬০ জন্য বিএসএফ জাওয়ানকে কঙ্গো দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই দলেই রয়েছেন অরুণাভ।‌ শান্তিরক্ষা মিশনের লক্ষ্যই হল, কঙ্গো সরকারকে সহায়তা প্রদান করে সেদেশের নাগরিকদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা। পাশাপাশি একজন মানবিক কর্মী হিসেবে সেখানকার মানুষের মানবাধিকারকে রক্ষা করা‌।

    প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস জড়িয়ে কঙ্গো দেশের সঙ্গে। মূলত আদি জনজাতির বাস। অনেক পরে সেখানে উপনিবেশ তৈরি করে ফরাসিরা। ১৯৬০ সাল ফরাসিদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। তার পরও একাধিক বৈদেশিক শক্তির আগ্রাসনের শিকার হয়েছে কঙ্গো। তার উপর দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়েছে। সেদেশের সরকারের সঙ্গে এম-২৩ জঙ্গিগোষ্ঠীর লাগাতার সংঘর্ষ হয়েছে। এখনও হয়। সবমিলিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে সে দেশের মানবতা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি  সকল ক্ষেত্রেই বেহাল অবস্থা। এর নেপথ্য কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহল মনে করে, কঙ্গোর ভূগর্ভে রয়েছ বহুমূল্যবান খনিজ পদার্থ। সেগুলি দখলে নজর রয়েছে পশ্চিম দুনিয়ার। তারাই নানা দিক দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে অশান্তি পাকিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে কঙ্গোর পাশেই দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। 

    অরুণাভ ও তাঁর দল কঙ্গোয় গিয়ে প্রথমে উঠেছিল শহর গোমাতে।  সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে বেনি শহরের চলে যান তাঁরা। এরই মধ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী এম-২৩ আক্রমণ করে গোমা শহরে। সেখানকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ধ্বংস করে দেয়। প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন পার্শ্ববর্তী শহর বেনি থেকে অরুণাভরা ছুটে গিয়েছিলেন বিধ্বস্ত গোমায়। সেখানকার মানুষদের কাছে খাবার, ওষুধ, থাকার জায়গার ব্যবস্থা করে দেন। ভয়ঙ্কর সেই জঙ্গিগোষ্ঠী একবার বেনি শহর দখল করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে। কিন্তু বাঙালি সন্তানের নেতৃত্বে দিল্লি থেকে যাওয়া পুরো দলটি কড়া হাতে মোকাবিলা করে। জঙ্গিদের বোকাবু শহরেই আটকে দেন তাঁরা। এখনও সেই বেনি শহরকে আগলে রেখেছেন অরুণাভরা।  কঙ্গোয় কচিকাঁচাদের সঙ্গে অরুণাভ। ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)