বিনোদবিহারীর নামে আর্ট গ্যালারি বিশ্বভারতীর কলাভবনের নন্দনে
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
এঁদের দু’জনেরই ছাত্র জীবন কেটেছে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নে গড়া বিশ্বভারতী-শান্তিনিকেতনে। এঁদের একজন দেশের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা গান্ধী আর অপরজন বিশ্ববরেণ্য চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে পিতা জওহরলাল নেহরু একমাত্র কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে শান্তিনিকেতনে রেখে গিয়েছিলেন এই উদ্দেশ্য নিয়ে যাতে, ইন্দিরা গুরুদেবের স্নেহচ্ছায়ায় থেকে শান্তিনিকেতন আশ্রমে থেকে তপোবন শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেন। দেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু হয়েছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথম আচার্য। দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ইন্দিরা গান্ধীও হন বিশ্বভারতীর আচার্য।
প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা এখানে সবার কাছেই ছিলেন আদরের ইন্দু। আর সত্যজিৎ রায় ছিলেন বিশ্বভারতীর কলাভবনের ছাত্র। ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বভারতীর আচার্য থাকাকালীন সময়ে তাঁর মাষ্টারমশাই নন্দলাল বসু স্মরণে কলাভবনের নন্দনে উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন নন্দন আর্ট গ্যালারির। মাষ্টারমশাই হিসেবে কলাভবনের শিক্ষক বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় সত্যজিৎ রায়ের জীবনে কতখানি প্রভাব ফেলেছিলো তা পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায় তাঁর বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে করা ‘ইনার আই’ তথ্যচিত্রে উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, মাষ্টারমশাই তাঁকে বলতেন, শিল্পে খোয়াই বাদ দিও না। খোয়াই আর তাতে একটা সলিটারি তালগাছ। ব্যস। আমার স্পিরিট, আমার জীবনের মূল ব্যাপারটা যদি কোথাও পেতে হয়, ওতেই পাবে। বলতে পারো, ওটাই আমি।
সেই বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় স্মরণে নন্দনের দ্বিতলে দু’টি ঘরে এবার তাঁরই নামাঙ্কিত স্থায়ী আর্ট গ্যালারি পথ চলা শুরু করল। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় তৈরী হয়েছে এই আর্ট গ্যালারি। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে এই আর্ট গ্যালারিতে নন্দলাল বসুর সময়কাল থেকে কলাভবনের সংগ্রহে থাকা দেশ-বিদেশের রিলিফ, ভাস্কর্য ও টেরাকোটা মিলিয়ে একশোটি কাজ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারমধ্যে টেম্পল টেরাকোটা, টু ফিমেল ফিগার, রামায়ণ, কৃষ্ণের মতো টেরাকোটা কাজগুলি স্থান পেয়েছে। এই প্রদর্শনী সকলের জন্য খোলা থাকবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এখানে প্রদর্শিত শিল্পকর্মগুলি দেখে শিল্প-শিক্ষক, গবেষক, পড়ুয়া থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শকও দেশ-বিদেশের টেরাকোটা কাজ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাবে বলে আশা করছে বিশ্বভারতীর কলাভবন কর্তৃপক্ষ।