এই সময়: মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তথাকথিত ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু সেই অনুমতি পাননি শিক্ষাকর্মী এবং ‘টেন্টেড’ বা ‘অযোগ্য’ শিক্ষকরা। ইতিমধ্যেই স্কুলভিত্তিক স্যালারি রিক্যুইজি়শন পাঠানোর সময়ও পেরিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীরই বেতন হবে কি না, হলে ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’ শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের তালিকা আলাদা করে কবে রিক্যুইজি়শন দেওয়া হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে সঙ্কটে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট ৯ হাজার ৪৮৭টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও টিচার ইনচার্জরা। হিসেব বলছে, এই সমস্যার জেরে ভোগান্তি বাড়তে চলেছে রাজ্যের প্রায় দু’লক্ষ শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর।
স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন, ‘প্রতি মাসে আমরা ১০–১২ তারিখের মধ্যে স্যালারি রিক্যুইজি়শন জমা দিই। এ বার বিশেষ পরিস্থিতি বলে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকরা (ডিআই–মাধ্যমিক) কয়েকদিন অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যা রায় দিয়েছে, তাতে স্কুলশিক্ষা দপ্তর অবিলম্বে কোনও নির্দেশিকা না পাঠালে সকলের বেতন আটকে যেতে পারে। আমাদের দৌড় বড়জোর ডিআই পর্যন্ত। তাঁদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও ডিআই-রা এক একরকম পরামর্শ দিচ্ছেন। তা-ও মৌখিক ভাবে। এখন আমরাই সবচেয়ে বিপাকে পড়েছি।’
পোর্টালে তালিকাভুক্ত থাকা সকলের নামে বেতনের রিক্যুইজি়শন জমা দিলে আদালত অবমাননার মুখে পড়তে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রধান শিক্ষকদের। ফলে বেতন নিয়ে টানাপড়েনে ২০১৬ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতনের সুপারিশও আটকে গিয়েছে।
একাধিক ডিআই বলছেন, শনি ও রবিবার সরকারি ছুটি। সোমবার অফিস খুলবে। আশা করছি, তারপরে বিকাশ ভবন থেকে কোনও নির্দেশ আসবে। সেটা স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। অন্যদিকে, বিকাশ ভবনের আধিকারিকদের বক্তব্য, ‘এটা একেবারেই সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। পর্ষদের মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশনের পরে পরিস্থিতি অনেকটা বদল হয়েছে। তাই সোমবার অফিস খুললে এ ব্যাপারে নবান্ন থেকে কিছু নির্দেশ আসতে পারে। আপাতত সেই অপেক্ষায় রয়েছি।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক–শিক্ষিকারা কী বলছেন?
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, ‘প্রতি মাসে ১০ তারিখের মধ্যে স্যালারি রিক্যুইজি়শন জমা দিই। স্কুলে ২০১৬ সালের একজন গ্রুপ সি কর্মী আছেন। তাঁর নাম স্যালারি পোর্টালে আছে। ওঁর জন্যই এখনও স্যালারি রিক্যুইজি়শন জমা করতে পারিনি।’ তাঁর সংযোজন, ‘মাসের শুরুতে বেতন পেতে হাতে সময় খুবই কম। আশা করি, ডিআই এবং পর্ষদের তরফে শীঘ্রই কোনও নির্দেশিকা পাব। তা না হলে অন্য শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীদের বেতন নিয়েও সমস্যা হবে।’ উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের চারঘাট গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী দাসের বক্তব্য, ‘২০১৬ সালে নিয়োগ হয়েছে এ রকম একজন গ্রুপ সি কর্মী আছেন। ওঁর জন্যই এখনও i-osms পোর্টালে স্কুলের অন্য শিক্ষক–শিক্ষিকাদের তালিকা জমা দিইনি। সহকারী জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকও কোনও নির্দেশ দেননি। তাই অপেক্ষায় আছি।’
বেহালার পর্ণশ্রী সতীপ্রসন্ন বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আমাদের একজনের নাম বাদ যাওয়ায় আদালত অবমাননার ভয়ে বাকি ন’জন শিক্ষকের রিক্যুইজি়শন সাবমিট করতে পারিনি। আমি নিজেও অবসরের মুখে। ডিআই’কে মেল করে জানতে চেয়েছিলাম, কী করব? কোনও উত্তর পাইনি।’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা থানার কালারিয়া হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক শান্তিময় মান্নার বক্তব্য, ‘একজন গ্রুপ ডি কর্মীর চাকরি যাওয়ায় তাঁর জন্য টিচার ইনচার্জ স্যালারি রিক্যুইজি়শন জমা দেননি। এ দিকে মাসের শুরুতেই আমাদের ইএমআই জমা দিতে হয়। বেতন পেতে দেরি হলে, সত্যিই খুব সমস্যায় পড়ে যাব।’