• ‘চাকরি নিশ্চিত করুক রাজ্যই’, দাবি চাকরিহারা শিক্ষকদের
    এই সময় | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিলেও ২০১৬ সালের শিক্ষক–শিক্ষিকাদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে না যাওয়ার ডাক দিল ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’। সংগঠনের আহ্বায়ক সঙ্গীতা সাহা শুক্রবার বলেন, ‘আমরা ছ’মাসের চাকরির জন্য আন্দোলন করছি না। ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করতে চাই। যতদিন না সসম্মানে স্থায়ী শিক্ষকের মর্যাদা পাচ্ছি ততদিন স্কুলে যাব না।’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘অন্যরা যদি ভাবে, কয়েকজন লড়াই করছে করুক, আমরা স্কুলে যাব, সেটা তাঁদের ব্যাপার। কিন্তু বুঝতে হবে, একটা লাঠি ভাঙা সহজ। কিন্তু অনেক লাঠি একসঙ্গে থাকলে ভাঙা যায় না।’

    এ দিকে, দিল্লির যন্তরমন্তরে অবস্থান ধর্না শেষে শুক্রবারই শহরে ফিরেছেন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র সদস্যরা। তাঁদের সাফ কথা, ‘আমরা নতুন করে আর পরীক্ষায় বসব না। তা হলে সার্ভিস ব্রেক হবে। রাজ্য সরকার এবং এসএসসি–র দুর্নীতির জন্য আমাদের নিয়োগ সঙ্কটে। তাই অবিলম্বে নিশ্চিত নিয়োগে রাজ্য সরকার আইনি পদক্ষেপ করুক।’ সংগঠনের সদস্য হুমায়ুন ফিরোজ মণ্ডলের দাবি, ‘রাজ্য আদালতের হাতে পায়ে ধরে আমাদের নিয়োগের আইনি স্বীকৃতি দেবে কি না, সেটা ওরা ভাববে। আমরা নতুন করে কোনও পরীক্ষায় আর বসব না।’ সংগঠনের অন্যতম আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল দিল্লি থেকে জানান, তাঁরা শনিবার স্কুলে যাবেন না। সোমবার 'যোগ্য–অযোগ্য'দের তালিকা প্রকাশের দাবিতে আবার স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) অভিযানের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। মঙ্গলবার রাজভবনে যাবেন। সে দিনও স্কুলে যাবেন না তাঁরা। তারপরে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন, স্কুলে যাবেন কি না।

    যদিও ‘যোগ্য’ বা ‘নন টেন্টেড’ শিক্ষক–শিক্ষিকাদের একাংশ বলছেন, ‘মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশনের আবেদনকে মান্যতা দিয়ে সু্প্রিম কোর্ট পড়ুয়াদের স্বার্থের কথা ভেবেই চলতি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত আমাদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এখন না গেলে ক্যাজুয়াল ও মেডিক্যাল লিভ কাটা হতে পারে।’ ফলে যাঁরা আজ থেকে স্কুলে যাবেন আর যাঁরা যাবেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ করবেন, তা নিয়েও নতুন জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা প্রশাসকদের একাংশ।

    চাকরিহারা শিক্ষকরা বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালতের রায় শুনেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা মোটেই স্বস্তি পাননি। স্কুলে ক্লাস নিলেও বিক্ষোভ আন্দোলনের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী, শুক্র ও শনিবার তাঁদের কর্মসূচি ছিল, জেলায় জেলায় ঘুরে যোগ্যদের দাবি সম্বলিত লিফলেট সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেওয়া। শুক্রবার কলকাতার রাস্তায় চাকরিহারা শিক্ষকদের লিফলেট বিলি করতেও দেখা যায়। পথচারীদের কাছ থেকে সই সংগ্রহ করেন শিক্ষকরা। আন্দোলরত শিক্ষকরা এ দিনও জানান, সরকারের ভূমিকাতে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। রিভিউ পিটিশনে ন্যায্য বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাবেন না তাঁরা।

    এ দিকে, শুক্রবার ছুটির দিনেও ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে সাময়িক ভাবে চাকরি ফিরে পাওয়া এক শিক্ষিকা বলেন, ‘যেমন করে এক অসুস্থ রোগীকে ভেন্টিলেশনে ঢুকিয়ে কয়েক দিনের জন্য বাঁচিয়ে রাখা হয়, তেমনই অবস্থা আমাদের।’ আরও এক ‘যোগ্য’ চাকরিহারা বলেন, ‘কেন বারবার আমাদের যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হবে? আজ থেকে দশ বছর আগে যে ভাবে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, আবার ভেরিফিকেশন, আবার ইন্টারভিউ…এই মানসিক অবস্থায় পরীক্ষা দেওয়াটা কষ্টকর।’ আন্দোলনকারীদের অন্যতম মুখ মেহবুব মণ্ডল আবার বলছেন, ‘যোগ্য-অযোগ্য স্পষ্ট হলো। অযোগ্যদের টার্মিনেশন লেটার ধরানো হোক। আমরা নতুন পরীক্ষা পদ্ধতিতে যেতেই চাই না।’

  • Link to this news (এই সময়)