সোমনাথ মাইতি, কাঁথি
সুপ্রিম নির্দেশে আজ, শনিবার থেকে স্কুলগুলির স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার কথা। তবু স্কুলগুলির পঠনপাঠন নিয়ে ধন্দ কাটছে না অভিভাবকদের মধ্যে। সামনেই এ বছরের মাধ্যমিকের ফল বেরোবে। শুরু হবে একাদশে ভর্তির তোড়জোড়।
আদালতের রায়ে যোগ্য শিক্ষকেরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ানোর ছাড়পত্র পেয়েছেন। কিন্তু তার পরে কী হবে? যোগ্য–অযোগ্য প্রশ্নটি আবার আদালত পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে। এই পরিস্থিতিতে নতুন ভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। চাকরিহারা শিক্ষকেরা পরীক্ষায় বসতে না চাইলে, কী ভাবে শিক্ষক সঙ্কট মিটিয়ে স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন সম্ভব হবে — শিক্ষক মহলের পাশাপাশি অভিভাবদেরও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সেই দুশ্চিন্তাও।
এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি স্কুলের খোঁজখবর নিচ্ছেন বহু অভিভাবক। প্রয়োজনে বোর্ড বদলের ভাবনাও উঁকি দিচ্ছে তাঁদের মনে। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা। গ্রামের স্কুল ছেড়ে জেলা সদরের তুলনায় ভালো বেসরকারি স্কুলের খোঁজ নিতে শুরু করেছেন অভিভাবকদের অনেকেই।
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাসিন্দা সুকান্ত জানার ছেলে এ বার মাধ্যমিক দিয়েছে। শুক্রবার সুকান্ত বলেন, ‘স্কুল নিয়ে এমন সমস্যা হবে ভাবিনি। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে কোথায় ভর্তি করতে পারব জানি না। বেসরকারি স্কুলেও খোঁজ নিচ্ছি।’ কাঁথিরই বাসিন্দা কাঞ্চন মাইতি বলছেন, ‘আমার মেয়ে মাধ্যমিক দিয়েছে। সরকারি স্কুলগুলোর যা অবস্থা দেখছি, কোথায় ভর্তি করব বুঝতে পারছি না। দিল্লি বোর্ডের স্কুলে ভর্তি করার চিন্তাভাবনা মাথায় আছে।’ রামনগরের সুকুমার বেরা বলছেন, ‘ভাবছি সায়েন্স পড়াব ছেলেকে। ভালো স্কুলে ভর্তি করব ভেবেছিলাম। কিন্তু ভালো টিচারই তো অনেক স্কুলে নেই। এই ডামাডোলে আর থাকবেন কি না তাও জানি না। ভালো বেসরকারি স্কুলের খোঁজও নিচ্ছি।’
উদাহরণগুলো কাঁথির হলেও চিত্রটা গোটা রাজ্যেরই। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বেসরকারি স্কুলে পঠনপাঠনের মাধ্যম ইংরেজি। তাতে ভর্তি হতে টাকাও লাগে বিস্তর। অন্যদিকে বেসরকারি বেশিরভাগ স্কুলই দিল্লি বোর্ডের অধীনে। সেখানেও পড়ানোর মাধ্যম ইংরেজি। ফলে, প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেমেয়েদের পক্ষে ইংরেজিতে খাপ খাইয়ে নেওয়াটা যে সহজ হবে না, সে কথাও বুঝতে পারছেন অভিভাবকেরা। আবার মাধ্যমিকে যত নম্বর পাওয়া যায়, তার নিরিখে দিল্লি বোর্ডের স্কুলে ভর্তি হওয়াটাও দুষ্কর। ফলে, তাঁরাও আতান্তরে পড়েছেন।
কাঁথিরই নয়াপুট সুধীরচন্দ্র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বসন্ত ঘোড়াই জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুলের একমাত্র ফিজ়িক্সের টিচারের চাকরি গিয়েছে। আদালতের রায়ের পর তিনি সোমবার থেকে স্কুলে আসবেন কিনা পরিষ্কার নয়। বসন্তের প্রশ্ন, ‘ছাত্রছাত্রীদের কী হবে? ভালো স্কুলে সকলে ভর্তি হতে পারবে তো?’ এগরার প্রত্যন্ত আটবাটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অশ্বিনী দোলাই বলছেন, ‘অভিভাবকেরা যে ভাবে প্রতিদিন খোঁজখবর নিচ্ছেন, তাতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে কিনা সন্দেহ।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে কোন অভিভাবক তাঁর ছেলেমেয়েকে এই স্কুলে পড়াতে চাইবেন? অভিভাবকদের কথা শুনে অনুমান করতে পারছি, এ বছর একাদশে ভর্তি কম হবে।’
কাঁথি, তমলুক, হলদিয়া ও পাঁশকুড়ায় বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছড়াছড়ি। কাঁথির মতো ছোট একটা শহরে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে সাতটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল থাকা সত্ত্বেও তিনটি বেসরকারি স্কুল রমরমিয়ে চলছে। অনেকের বক্তব্য, এই ছবি থেকেই পরিষ্কার কী হতে চলেছে আগামী দিনে।