• ঘন্টা বাজানো, স্কুল খোলা-বন্ধ করবে কে!, প্রশ্ন অনেক, উত্তর?
    এই সময় | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: এ বার রাস্তায় নামলেন তথাকথিত যোগ্য শিক্ষাকর্মীরা। শুক্রবার কলকাতার পার্ক সার্কাস থেকে মিছিল করে তৃণমূল ভবনে যান গ্রুপ–সি এবং গ্রুপ–ডি কর্মীরা। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখাও করেন তাঁরা।

    যোগ্য শিক্ষাকর্মীদের তরফে সুজয় সর্দার জানিয়েছেন, শিক্ষকদের মতো তাঁদের মধ্যেও যোগ্য ও অযোগ্য আছেন। তাঁর প্রশ্ন, যাঁরা অযোগ্য নন, সেই সব শিক্ষকরা যদি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারেন, তা হলে যোগ্য শিক্ষাকর্মীরা কেন যেতে পারবেন না? এই রায় অমানবিক।

    সুপ্রিম কোর্টে মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশন ফাইল করে ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষাকর্মীদেরও চাকরি বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সেই আর্জির ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘নন–টেন্টেড’ শিক্ষকদের স্কুলে ফেরার সুযোগ দিলেও প্রধান বিচারপতি বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘আমরা শুধু শিক্ষকদের বিষয়টিই বিবেচনা করব৷ শিক্ষাকর্মীদের নয়৷ এই কর্মীদের নিয়োগেই সব থেকে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ স্কুলগুলি বুঝবে কী ভাবে তারা কর্মীদের অভাব পূরণ করবে৷’

    চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করার পরে শুক্রবার ব্রাত্য বলেন, ‘সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে কোনও প্রতিশ্রুতি দিইনি। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, আইনি পরামর্শ চলছে। এখন এর ঊর্ধ্বে কিছু বলা মানে, সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা করা।’ তবে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বললেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক–শিক্ষিকারা। কলকাতা থেকে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বহু স্কুলেই প্রশ্ন উঠেছে, গ্রুপ–সি এবং গ্রুপ–ডি একেবারে শূন্য হয়ে গেলে চলবে কী করে? ওঁরাই ঘণ্টা বাজান, স্কুল খোলেন–বন্ধ করেন, এমনকী সমস্ত অফিশিয়াল কাজকর্মও করেন। তার কী হবে?

    পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র এই পরিস্থিতিতে স্কুলশিক্ষা কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁর আর্জি, স্কুলে–স্কুলে ক্যাজ়ুয়াল কর্মী নিয়োগের জন্য ভাতা দিক স্কুলশিক্ষা কমিশন। তাঁর আশঙ্কা, অন্যথায় স্কুল ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। শিলিগুড়ির নেতাজি গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রুম্পা সাহা বলছেন, ‘স্কুলে দু’জন করে গ্রুপ–সি এবং গ্রুপ–ডি কর্মী ছিলেন। আদালতের নির্দেশে একজন মাত্র গ্রুপ–সি কর্মী থাকলেন। খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছি। প্রতিদিন স্কুল খোলা, ক্লাস রুম খোলা, ক্লাসে ক্লাসে নোটিস পাঠানো, ছাত্রী ভর্তি — হাজারো কাজ! কী করে সামাল দেব, জানি না।’

    জলপাইগুড়ির গড়ালবাড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মদন সরকার জানিয়েছেন, তাঁর স্কুলে গ্রুপ–সি পদে একজনই কর্মী ছিলেন। আদালতের নির্দেশে তাঁরও চাকরি গিয়েছে। এখন প্রধান শিক্ষকের কাজের সঙ্গে প্রতিদিন সময় করে ক্লার্কদের যাবতীয় কাজও দেখতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘কতদিন এ ভাবে চালাতে পারব বুঝতে পারছি না।’ জেলারই বড়দিঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের কথায়, ‘আমার স্কুলে একজন গ্রুপ–সি ও একজন গ্রুপ–ডি কর্মী ছিলেন। আদালতের নির্দেশের পরে দু’জনেই স্কুলে আসছেন না। দেড় হাজারের ওপর ছাত্রছাত্রী। ঘোর বিপদে পড়েছি।’

    বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের মর্জাৎপুর হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুভাষচন্দ্র কোনাইয়ের বক্তব্য, আগেই স্কুলের এক গ্রুপ–ডি কর্মী অবসর নিয়েছেন। আদালতের রায়ে চাকরি গিয়েছে একমাত্র গ্রুপ–সি কর্মীর। তিনিও প্রচন্ড সমস্যায় পড়েছেন। কম্পিউটারে বিভিন্ন ডেটা এন্ট্রির কাজ ওই গ্রুপ–সি কর্মীই করতেন। তাই মাঝেমধ্যে তাঁকে ডেকেই সব দেখে নিতে হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)