• দিলীপ আর সংঘের প্রচারক নন, বিয়েতে আপত্তি নেই কেশব ভবনের
    প্রতিদিন | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • সুদীপ রায়চৌধুরী: প্রথম ধাক্কার আকস্মিকতায় বেসামাল দেখিয়েছিল। কিন্তু বেলা গড়াতেই ‘ঘরের ছেলে’ দিলীপ ঘোষের বিয়ে নিয়ে নিজেদের সামলে নিয়েছে বঙ্গ আরএসএস। দিনের শেষে কেশব ভবনের বক্তব‌্য, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ থেকে দায়িত্বমুক্ত হয়ে রাজ‌্য বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই দিলীপ ঘোষ আর সংঘের প্রচারক নন। ফলে তাঁর বিয়ে করায় আপত্তি বা সমর্থনের কোনও প্রশ্নই নেই। এটা সম্পূর্ণ ওঁর ব‌্যক্তিগত বিষয়।

    বঙ্গ বিজেপির অন‌্যতম জনপ্রিয় মুখ। যাঁকে কেশব ভবন নিজ কোষাগারের ‘গিনি সোনা’ বলে চিহ্নিত করে এসেছে। সেই দিলীপ ঘোষের ৬১ বছর বয়সে আচমকা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে চর্চা হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বক্তব‌্য জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল সঙ্ঘের পূর্ব ভারত ক্ষেত্রের সহ-প্রচার প্রমুখ জিষ্ণু বসুর সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব‌্য, ‘‘কেউ বিয়ে করছেন কি না বা কেন করছেন, তার থেকে আমাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মুর্শিদাবাদে হিন্দুরা বেঁচে আছেন কি না, সেটা!’’ দিলীপ ঘোষের বিয়ে করা নিয়ে চারপাশে শোরগোল প্রসঙ্গে সত‌্যকাম ও জবালাকে নিয়ে লেখা কবিগুরুর কবিতার উদ্ধৃতি টেনে তাঁর সরস মন্তব‌্য, ‘‘রবীন্দ্রনাথ তাঁর ব্রাহ্মণ কবিতায় লিখেছিলেন ‘মধুচক্রে লোষ্ট্রপাতে বিক্ষিপ্ত চঞ্চল/পতঙ্গের মতো– সবে বিস্ময়বিকল’। এটা সেরকমই! আমাদের যত না কিছু মনে হচ্ছে, যাঁরা সারা জীবনে কখনও আমাদের খবর নেন না, তাঁদের মনে এখন বেশি অশান্তি হচ্ছে এই ভেবে যে দিলীপ ঘোষ কেন বিয়ে করছে?” আরএসএসের অন‌্যতম এই শীর্ষ পদাধিকারীর কথায়, ‘‘দিলীপ ঘোষ বহুদিন থেকেই প্রচারক নন। দিলীপ ঘোষ বিয়ে করতেই পারেন। তাঁর মনে হয়েছে তিনি বিয়ে করবেন। তাতে কারও কিছু বলারও নেই। আর আমাদের তাতে কোনও টেনশন নেই।’’

    বৃহস্পতিবার সোশ‌াল মিডিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ‌্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দুটি পোস্টের পর দিলীপের বিয়ে করার খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে দল ও সংঘের তরফ থেকে দিলীপকে বিরত করার প্রবল চেষ্টা হয়েছিল বলে খবর। এমনকী, দিল্লি ও নাগপুর থেকেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন‌্য ফোন এসেছিল বলে অসমর্থিত সূত্রে খবর। কিন্তু স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দিলীপ সেসব উপরোধ-অনুরোধকে পাত্তা দেননি। শেষপর্যন্ত অবস্থান পাল্টে ৬১ বছরের দিলীপের সঙ্গে ৫১ বছরের রিঙ্কু মজুমদারের বিয়েকে মেনে নিতে বাধ‌্য হয় গেরুয়া শিবির। ড‌্যামেজ কন্ট্রোলে শুক্রবার সাতসকালেই উপহার হাতে দিলীপ ঘোষের বাড়িতে যান সুনীল দেওধর, মঙ্গল পাণ্ডে, সতীশ ধন্দের মতো আরএসএস নেতাদের সঙ্গে সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো-সহ বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। দিলীপের নিউটাউনের বাড়িতে বেশ কিছুক্ষণ থাকেন তাঁরা। দিলীপের হাতে তুলে দেন ফুল, উপহার। কথা বলেন দিলীপের মায়ের সঙ্গে।

    কেশব ভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ‘‘সংঘের নিয়ম অনুযায়ী সংঘে কেউ যোগদান করলে প্রথমে তাঁকে বিস্তারক হিসাবে কাজ করতে হয়। সেই সময় তাঁদের মানসিকতা দেখে প্রচারক পদে উন্নীত করা হয়। প্রচারক ও অ-প্রচারকের মধ্যে পার্থক‌্য হচ্ছে যে সংঘ তাঁর খরচ চালায় কি না। এই খরচকে ‘বিত্তপত্তক’ বলে। সংঘ যদি কারও খরচ না চালায়, তবে তিনি প্রচারক নন। দিলীপ ঘোষের খরচ বহুদিনই, প্রায় ১০ বছর সংঘ চালায় না। তাই দিলীপ ঘোষ এখন প্রচারক নন।’’ তাঁর কথায়, কোনও প্রচারক যদি মনে করেন যে আর প্রচারক থাকবেন না, তখন তিনি সংসারে ফিরে যেতে পারেন। আমাদের রাজ্যে এই প্রবণতা কম। কিন্তু আমাদের পাশের রাজ‌্য ওড়িশায় ৫০ শতাংশ প্রচারক একটা সময়ের পর ফিরে গিয়ে বিয়ে করে সংসারধর্ম পালন করেন। মহারাষ্ট্রে একই ছবি।’’ এ প্রসঙ্গে একদা বাংলার দায়িত্বে থাকা অরবিন্দ মেননের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অরবিন্দ মেননও একসময় প্রচারক থাকলেও বহুদিন আগেই বিজেপিতে যোগদানের জন‌্য সেই দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। তিনিও পরবর্তীকালে বিয়ে করেছেন।”

    কৈশোরে ঘর ছেড়ে আরএসএসে যোগ দিয়ে ব্রাহ্মচর্যের দীক্ষা নিয়েছিলেন গোপীবল্লভপুরের দিলীপ। ২০১৪-য় দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর বাংলায় দলকে শক্তিশালী করতে রাজ‌্য বিজেপিতে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশ। তারপর প্রায় এক দশক বিধায়ক ও সাংসদ থাকার পর ৬১ বছর বয়সে ‘চিরকুমার ব্রত’ ত‌্যাগ করে সংসার জীবনের চেনা পথে ফিরলেন দিলীপ ঘোষ।
  • Link to this news (প্রতিদিন)