দাদু পড়াশোনা করেছিলেন খড়্গপুর IIT থেকে। তিনিই স্বপ্ন দেখানোর সাহস দেখিয়েছিলেন। এ দিকে খড়্গপুরের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে ছোট থেকেই খড়্গপুর IIT-র ফলকের দিকে নজর ছিল অর্চিস্মানের। সসম্মানে পড়ুয়া হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভিতরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। সেই লক্ষ্যেই পড়াশোনা। ডেরিভেটিভ, ইন্টিগ্রেশন, মর্ডান ফিজিক্স সবটাই ছিল ভালোলাগা, ভালোবাসা। সবমিলিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে ইচ্ছের খামতি কোনওদিন হয়নি।
অবশেষে মিলল দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল। শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফলাফল। সেই পরীক্ষায় টপারদের তালিকায় রয়েছেন খড়্গপুরের অর্চিস্মান নন্দী। খড়্গপুরের চাঙ্গুয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের বারবেটিয়ার বাসিন্দা অর্চিস্মান। বাবা একটি ওষুধ সংস্থার আধিকারিক। মা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী।
অর্চিস্মান বরাবর মেধাবী। প্রাথমিকের পড়াশোনা বাংলা মিডিয়ামে। পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম সাউরিতে (বেলদা সংলগ্ন) অবস্থিত সাউরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন অর্চিষ্মান। এই স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী নারায়ণচন্দ্র রানাও। মায়ের চাকরি সূত্রে সাউরি থেকে খড়গপুর গ্রামীণের চাঙ্গুয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের বারবেটিয়াতে আসেন অর্চিষ্মানরা। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অর্চিষ্মান খড়্গপুর শহরের সেন্ট অ্যাগনেস স্কুলে পড়াশোনা করেন। এর পর একাদশ শ্রেণিতে তিনি ভর্তি হন আইআইটি খড়্গপুর ক্যাম্পাসে অবস্থিত ডিএভি মডেল স্কুলে। আইসিএসই -তেও ৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে সর্বভারতীয় স্তরে পঞ্চম স্থান দখল করেছিলেন তিনি। সঙ্গে চলছিল IIT-তে প্রবেশের জন্য এন্ট্রান্স টেস্টের প্রস্তুতিও। একাগ্রতা, পরিশ্রমে কোনও খামতি রাখেননি এই মেধাবী।
অর্চিষ্মানের মামাদাদু বঙ্কিমবিহারী মাইতি সত্তরের দশকে তিনি আইআইটি খড়্গপুর থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর পাশ করেছিলেন। মাটির টানেই একাধিক বড় বড় চাকরির প্রলোভন ছেড়েছিলেন তিনি, দাবি অর্চিষ্মানের বাবা ও মায়ের। খাকুড়দার বড়মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের রসায়ন পড়াতেন তিনি। দাদুকে দেখেই IIT খড়্গপুরে পড়াশোনার ইচ্ছে জাগে অর্চিষ্মানের।
গত জানুয়ারিতে জয়েন্টের প্রথম দফার পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে অঙ্কুরহাটির কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল অর্চিস্মানদের গাড়ি। সেই মানসিক পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দিয়ে প্রায় ৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। আশানুরূপ ফল না হওয়ায় ফের চলতি মাসেই দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা দেন অর্চিস্মান।
সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ২১ জনের পার্সেন্টাইল ১০০। আর এই ২১ জনের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দেবদত্তা মাঝি এবং অর্চিস্মান নন্দী। তাঁর সাফল্যে খুশি বাবা মিঠুন নন্দী ও মা অনিন্দিতা নন্দী। এই কৃতী জানান, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে খড়্গপুর IIT-তে ভর্তি হতে চান তিনি।