দিব্যেন্দু সরকার ■ আরামবাগ
প্রশাসনিক কঠোর পদক্ষেপ। আর তার জেরেই বন্ধ বালি খাদান। দীর্ঘদিন ধরেই আরামবাগ মহকুমা–সহ আশপাশের এলাকার নদীগুলি থেকে বালিখাদগুলি বিভিন্ন কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই আকাশছোঁয়া বালির দাম। বালিতে আর হাত দেওয়াই যায় না। তাই বাড়ি নির্মাণের স্বপ্ন এখন অনেকের কাছেই দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে। এক সময়ে যেখানে স্বল্প খরচে নির্মাণ সম্ভব ছিল, এখন শুধুমাত্র বালি কেনাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরামবাগ মহকুমায় বালির দাম কয়েক বছরে লাফিয়ে তিন গুণ হয়ে গিয়েছে, যার ফলে সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে নির্মাণকাজ স্থগিত রেখেছেন, আবার কেউ বাড়ির পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বালির এই মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো, স্থানীয় খাদানগুলির বন্ধ হয়ে যাওয়া। ফলে, বিষ্ণুপুর, বর্ধমানের মতো দূরবর্তী এলাকা থেকে বালি আনতে হচ্ছে, যার ফলে পরিবহণ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আগে যে বালি ২ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, এখন তার মূল্য সাড়ে ৫ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। আরামবাগের এক ব্যবসায়ী প্রতাপ সাহা বলছিলেন, 'কিছু দিন আগেও এক ট্র্যাক্টর মোটা বালির দাম ছিল ২ হাজার টাকা, এখন তা বেড়ে সাড়ে ৫ হাজার টাকা হয়েছে।' একই ভাবে, বালি ব্যবসায়ী শেখ রিপন আলি জানান, ৩ হাজার টাকার বালি কিনতে এখন ৬ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।
ফলে, নির্মাণের খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বালির দাম। বছর কয়েক আগেও ফুল পাঞ্জাব লরির বালির দাম ছিল ১০ থেকে ১৫ হাজারের নীচে। এখন সেই বালির দাম প্রায় ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে, বাংলার বাড়ি বা আবাস যোজনার বাড়ি তৈরি করতে গিয়েও পিছপা হচ্ছেন অনেকেই। যে মূল্য দেওয়া হচ্ছে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে, তা দিয়ে প্রায় কিছুই নির্মাণ সম্ভব নয়। সে কারণেই সরকারি অনুদানের নির্মাণ প্রকল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অশোক আদক, দিলীপ আদক–সহ অনেকে বলছিলেন, 'সরকার যে টাকা বরাদ্দ করছে, তা বালি-পাথর কিনতেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। নিম্নবিত্তদের পক্ষে বাড়ি নির্মাণ করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।' তাঁদের অভিযোগ, নির্মাণসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায়, সরকার থেকে বরাদ্দ করা অর্থ যথেষ্ট হচ্ছে না। তাই বাড়ির কাজ থমকে যাচ্ছে।
সঙ্কট মোকাবিলায় স্থানীয় খাদানগুলি পুনরায় চালু করার দাবি উঠছে। খাদান চালু হলে পরিবহণ খরচ কমবে এবং বালির দাম স্বাভাবিক হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র খাদান চালু করাই যথেষ্ট নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ করতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে নির্মাণ খাত আরও গভীর সঙ্কটে পড়তে পারে। আর এর জন্য তাঁরা দায়ী করছেন জেলা প্রশাসনকেই। জেলার কর্তাব্যক্তিদের অনীহা ও চরম গাফিলতির জন্যই এই সমস্ত খাদ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে জেলায় প্রায় ২০টির মতো খাদ বন্ধ। যার মধ্যে আরামবাগ মহকুমাতেই রয়েছে ১৫টি খাদ।
এক বালিখাদান মালিক জ্যোছন দেবরায় বলেন, 'সরকার অকশন দিচ্ছে। আমরা ৫০ শতাংশের বেশি টাকা জমা করেছি। কিন্তু তাতেও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বা খাদগুলি খোলাও হচ্ছে না। এতে শুধু আমরা নই, সমস্ত স্তরের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।'
এই বিষয়ে হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া বলেন, 'হ্যাঁ, এটা শুনেছি। অনেকেই সমস্যার মধ্যে আছেন। বিষয়টি জেলাশাসক দেখেন। আমরা এই নিয়ে আলোচনা করব।'