• পার্কিং জটে অবরুদ্ধ রাস্তা, নাকাল হাওড়াবাসী
    এই সময় | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া

    রাস্তা তুমি কার? হাওড়াবাসীর কাছে এখন এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে! শহরের আনাচে কানাচে তৈরি হয়েছে পার্কিং লট। সেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লাইন দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকছে। তার ফলে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ায় যানজটে ন‍াকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনা। অভিযোগ, পুরসভার অনুমোদন ছাড়াই হাওড়া শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবসা চলছে। তা থেকে ফি–বছর লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হলেও তার ছিটেফোটাও পুরসভার কোষাগারে জমা পড়ছে না।

    কয়েক বছর আগে এই গাড়ি রাখাকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে গিয়েছিল হাওড়া আদালত চত্বরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সে বার পুলিশ ও র‍্যাফ নামাতে হয়েছিল। ওই ঘটনার পরে গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। কিন্তু হাওড়ার পার্কিং সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। হাওড়া শহরে যে সব অনুমোদিত পার্কিং জোন রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হাওড়া আদালত। পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, হাওড়া আদালতের সামনে শ’দুয়েক গাড়ি রাখার কথা। কিন্তু অফিস টাইমে তার দ্বিগুণেরও বেশি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, রাস্তার একটি লাইনে গাড়ি পার্ক করার কথা।

    কিন্তু বাস্তবে এখানে দু’–তিনটে লাইনে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে রাস্তার পরিসর ছোট হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন যান চালকরা। শুধু তাই নয়, পুরসভার অনুমোদন ছাড়াই আদালত চত্বরে বেআইনি ভাবে গাড়ি রেখে দিচ্ছেন অনেকে। এটা অবশ্য কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হাওড়া শহরের প্রায় সমস্ত বড় রাস্তার উপরে পার্কিং জোন তৈরি হয়েছে। তাদের অধিকাংশেরই পুরসভার অনুমোদন নেই। কোথাও আবার রাস্তার উপরেই তৈরি হয়েছে অটো স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ড, টোটো স্ট্যান্ড। যেমন, উত্তর হাওড়ার অতি ব্যস্ততম এলাকা সালকিয়া চৌরাস্তা মোড়, ঘুসুড়ি, হাওড়া ময়দান ইত্যাদি এলাকায় রাস্তার উপরেই রয়েছে অটো ও টোটো স্ট্যান্ড রয়েছে।

    শ্রী অরবিন্দ রোডের উপরে রয়েছে মিনি বাস স্ট্যান্ড। গত কয়েক বছরে হাওড়া শহরে টোটোর দৌড়াত্ম্য খুবই বেড়ে গিয়েছে। তাদের অনেকেরই বৈধ লাইসেন্স নেই। শুধুমাত্র ইউনিয়নের অনুমতি পত্র নিয়ে শহরের বুকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। গাড়ির সংখ্যাও আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। সেই অনুপাতে শহরের রাস্তা বাড়েনি। ফলে যতদিন যাচ্ছে, হাওড়া শহরে যানজট বেড়েই চলেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ থেকে স্কুল ছাত্র–ছাত্রী, প্রত্যেকেই নাকাল হচ্ছেন। অভিযোগ, পুরসভা এবং পুলিশের কিছু আধিকারিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেই হাওড়া শহরে বেআইনি পার্কিংয়ের ব্যবসা চলছে বছরের পর বছর ধরে। এর পিছনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও মদত রয়েছে।

    পুরসভার অনুমোদিত কার পার্কিং লটেও বেশি সংখ্যায় গাড়ি রাখা হচ্ছে। কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ, সেটা অনেক সময় জানতেই পারছে না সাধারণ মানুষ। গাড়ি রাখার জন্য অনেক সময় বেশি টাকা চাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। হাওড়া পৌরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘পুরসভার অনুমোদিত কার পার্কিং জোনে কোথায় কতগুলো গাড়ি রাখা যাবে, সেই তালিকা হাওড়া সিটি পুলিশকে দেওয়া রয়েছে। তার থেকে বেশি গাড়ি থাকলে সেটা পুলিশের দেখার কথা।’ পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, হাওড়া শহরে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা কম। অনেকে পার্কিং লটে না রেখে রাস্তায় উপরে যত্রতত্র গাড়ি রেখে দেন। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কেস করে। অনুমোদিত পার্কিং লটে বেশি গাড়ি রাখলে পুলিশের তরফ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

  • Link to this news (এই সময়)