মুর্শিদাবাদে নিহত বাবা-ছেলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যপাল
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
মুর্শিদাবাদে অশান্তি ঘটনায় খুন হওয়া বাবা-ছেলের বাড়িতে গেলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শনিবার সকালে নিহত বাবা-ছেলে হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের বাড়িতে যান তিনি। রাজ্যপালের পা ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত বৃদ্ধের স্ত্রী। কাঁদতে কাঁদতে তিনি রাজ্যপালকে বললেন, ‘আমার সব হারিয়েছে। আমরা ঘুমোতে পারছি না। আপনি দয়া করে কিছু করুন।’ তাঁদের সান্ত্বনা দেন রাজ্যপাল। আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলে প্রথমেই শান্তি ফেরানোর বার্তা দেন তিনি। নিহতের পরিবারকে নিজের ফোন নম্বরও দেন রাজ্যপাল। রাজ্যপাল বলেন, ‘শান্তি ফেরানোই মূল লক্ষ্য। তাতে জোর দিতে হবে। আর এর জন্য রাজ্য সরকারের উচিত উপযুক্ত পদক্ষেপ করা।’
ধুলিয়ান পুরসভার জাফরাবাদের বাসিন্দা ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বেরোনোর সময় আশপাশের বাসিন্দারা রাজ্যপালকে তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা জানান। এলাকায় বিএসএফ ক্যাম্প করার দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে দাবি জানাতে থাকেন স্থানীয়রা। বাসিন্দারা অভিযোগের সুরে বলেন, ‘এখনও তাঁদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এলাকা ছেড়ে চলে না গেলে ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
পীড়িতদের সব অভিযোগ শুনে রাজভবনের পিসরুমের ফোন নম্বর দিয়েছেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হবে। দ্রত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। সমস্যা মনে হলেই পিসরুমের নম্বরে ফোন করবেন।’ ক্যাম্পের বিষয়টি রাজ্যকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সিভি আনন্দ বোসের কথায়, ‘আমি ওঁদের বলেছি বিচার ওঁরা পাবে। বিএসএফ ক্যাম্পের বিষয়টি রাজ্যকে আমি জানাব। কেন্দ্রকেও বলব।’ জাফরাবাদে প্রায় ১৩ মিনিট ছিলেন রাজ্যপাল। সেখান থেকে বেদবোনা রওনা হন তিনি। নিহতের বাড়িতে রাজ্যপাল যাওয়ার আগে সেখানে গিয়েছিলেন মালদহের ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র।
প্রসঙ্গত, জাফরাবাদে বাবা-ছেলের খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। মূলচক্রী ইনজামুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হিংসার ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেছে রাজ্য। হিংসার ঘটনায় তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত মোট ২৭৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
দিনকয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে অনুরোধের সুরে বার্তা দিয়েছিলেন, যাতে এখনই কেউ মুর্শিদাবাদ বা মালদহে না যান। তবে রাজ্যপালে সেই বার্তা উপেক্ষা করেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বেরিয়েছেন। শুক্রবার মালদহে যান তিনি। বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর স্কুলের আশ্রয় শিবির ঘুরে দেখেন রাজ্যপাল। সেখানে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। আর শনিবার মুর্শিদাবাদের নানা এলাকা ঘুরে দেখেন সিভি আনন্দ বোস।
উল্লেখ্য, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আবহে গত শুক্রবার অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, সুতি, শামসেরগঞ্জ সহ বেশ কিছু এলাকায়। সেই অশান্তির জেরে তিন জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার তদন্তে রাজ্য পুলিশ বুধবার সিট গঠন করেছে। প্রশাসনের উদ্যোগে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জনজীবন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও দোকানের তালিকা প্রস্তুত করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হচ্ছে সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরির কাজ। পাশাপাশি ঘরছাড়া পরিবারগুলিকে ঘরে ফেরাতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতেই এলাকা পরিদর্শনের জন্য বেরিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো ওয়াকফ আইনের বিরোধিতার আঁচে ক্ষতি হওয়া পরিবারগুলিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি পুনর্নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে থেকে যাঁরা নিজেদের বাড়ি ফিরছেন, তাঁদের জন্য জরুরি কিছু আসবাবপত্র দিচ্ছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদে অশান্তিতে আড়াইশোর বেশি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। শ’খানেক দোকানে ভাঙচুর চলেছে। এই সংখ্যা অবশ্য আরও বাড়তে পারে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আপৎকালীন ভাবে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু জরুরি সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনাই প্রশাসনের লক্ষ্য।’