২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে টার্গেট করেই কি দিল্লির বিজেপি নেতৃত্ব বাংলায় ‘গভীর ষড়যন্ত্রে’র পরিকল্পনা করেছে? সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ এবং রাজ্যের কিছু অংশে হিংসাত্মক ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন উঠেছে। এমনিতে ওয়াকফ আইন যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকার অতি সক্রিয় হয়েছে, তাতে তো মনে হচ্ছে, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে সাধারণ জনজীবন যেসব সমস্যায় জেরবার, তাতে দিল্লির কর্তাদের কোনও হেলদোল নেই। যেন ওয়াকফ আইনই দেশের একমাত্র সমস্যা।
মুর্শিদাবাদ জেলার মারদাঙ্গায় পড়শি বাংলাদেশের জঙ্গিদের জড়িত থাকার স্পষ্ট অভিযোগ উঠেছে। কারণ, হামলাকারীদের মধ্যে বহু মানুষ অচেনা দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করেছে। তারা কারা? কোথা থেকে এল? অভিযোগ উঠেছে, এদের মধ্যে মিশে রয়েছে বাংলাদেশি জঙ্গিরা। বলিহারি বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-কে। তারা সীমান্ত পাহারার নামে নীরব দর্শক। অবাধে বিদেশি জঙ্গিরা ভারতে ঢুকছে, হামলা চালাচ্ছে। আবার ফিরেও যাচ্ছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি যে ভালো নয়, সেটা আমরা জানি। সে দেশের মানুষ প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অনেকেই মনে করছেন, ইউনূস সরকার দেশবাসীর চোখ অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টায় আছেন। ভারতবর্ষে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারলে, তাঁদের সেই উদ্দেশ্য অনেকটাই সফল হবে। আর অশান্তি যদি পশ্চিমবঙ্গে সৃষ্টি করা যায়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা!
আবার দেখুন, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের টার্গেটও এক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জব্দ করতে এ রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে পারলে আগামী বছর বিধানসভা ভোটে ফয়দা তোলা যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন। বিভাজনের রাজনীতির পরিণাম হল, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।
এই সাম্প্রদায়িক হিংসা এখানে বিক্ষিপ্তভাবে হলেও, হচ্ছে। আসলে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আটকে রেখে মোদী সরকার বাংলাকে টাইট করতে চেয়েছিল। কিন্তু মমতার দক্ষ প্রশাসন সে গুড়ে বালি দিয়ে দিয়েছে। বিগত লোকসভার নির্বাচনে (২০২৪) এ রাজ্যে বিজেপির শোচনীয় ফল হয়েছে। তাই বাংলাকে ভাতে মারার কৌশল ব্যর্থ হওয়াতে, এবার গেরুয়া শিবির মরিয়া হয়ে উঠেছে। ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ করে বাংলায় অশান্তির আগুন ছড়াতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেসের শত্রুরা।
কিন্তু বাংলার আপামর মানুষের পাহারাদারের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে তিনি মা-মাটি-মানুষের সরকারকে দাঙ্গা রোধে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর অন্যদিকে, আমজনতাকে সজাগ করতে নিজেই মাঠে নেমেছেন। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভায় বুধবার তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বিভাজনের রাজনীতি কোনওভাবেই বরদাস্ত নয়।