লক্ষ্য গ্রামবাংলার মন জয়, শুভেন্দু-সুকান্তদের ‘গ্রামমুখী’ করতে ‘ফ্লপ’ কর্মসূচি ফের চালু করছে বিজেপি
প্রতিদিন | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: গ্রাম না জিতলে যে বাংলা দখল সম্ভব নয়, দেরিতে হলেও সেটা অনুধাবন করতে পেরেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তাই ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে গ্রাম দখলের লক্ষ্যে ব্যর্থ হওয়া ‘গ্রাম চলো’ কর্মসূচি ফের শুরু করতে চলেছে গেরুয়া শিবির। দলের শহুরে নেতামন্ত্রীদের গ্রামমুখী করাটাই উদ্দেশ্য বিজেপির।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ছ’টি আসন কমেছে বিজেপির। সেই হারের ময়নাতদন্তে যা উঠে এসেছে সেটার সারমর্ম হল, কলকাতা ছাড়া রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের আধা শহর বা শহরাঞ্চলগুলিতে তৃণমূলের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে বিজেপি। আবার কোথাও কোথাও দল সামান্য এগিয়ে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে গেলেই অনেকটা পিছিয়ে পড়ছে গেরুয়া শিবির। যার মূল কারণ সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং তৃণমূল স্তরে দলের নীতি আদর্শের কথা পৌঁছে দিতে না পারা। সেই সমস্যা মেটাতে আগেও গ্রাম চলো কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই কর্মসূচি একপ্রকার বাধ্য হয়েছে।
এর আগের কর্মসূচটিতে পুরনো ও নতুন মণ্ডল সভাপতি-সহ দলের ঊর্দ্ধতম সকল পদাধিকারী, ব্লক, পঞ্চায়েত সদস্য এবং পুরসভার কাউন্সিলরদের গ্রামমুখী করার চেষ্টা করেছিল গেরুয়া শিবির। প্রত্যেক কর্মীকে আট ঘন্টার জন্য একটি গ্রাম, পাড়া বা বস্তি পরিদর্শন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি বলা হয়েছিল, এইসব এলাকা পরিদর্শনের সময় মন্দির, হাসপাতাল, স্কুল বা রাস্তায় স্বচ্ছতা অভিযান করতে হবে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ১০জন সুবিধাভোগী বা লাভবান ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। প্রবীণ বিজেপি কর্মীদের সংবর্ধনা দেওয়া এবং বুথ কমিটির সভা করতে হবে। বিজেপির পতাকা-সহ কর্মীদের নিয়ে রাস্তায় শোভাযাত্রার কথাও বলা হয়েছিল। জেলাস্তর থেকে যা রিপোর্ট, প্রায় ১৩০০ মণ্ডল কমিটির মধ্যে অর্ধ্বেক মণ্ডলে নাম কা ওয়াস্তে এই কর্মসূচি হয়েছে। হাতে-গোনা কর্মী-সমর্থকরা নেমেছিল। আর বুথে তো এই কর্মসূচির জন্য সেভাবে কর্মীই পাওয়া যায়নি।
কিন্তু ছাব্বিশের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সেই ব্যর্থতাকে পিছনে ফেলে ফের ‘গ্রাম দখল’ করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। এবার একেবারে শীর্ষস্তরের নেতাদের গ্রামমুখী করে। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের স্তরে নির্দেশ এসেছে রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের জন্য রয়েছে আরও নীচের স্তরে গিয়ে জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করতে হবে। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সেজন্য প্রথম সারির নেতাদের রুটিনও বেঁধে দেওয়া হবে। এই কর্মসূচির পোশাকি নাম ‘গ্রাম চলো’ এবং ‘বস্তি চলো’। একেবারে সুকান্ত মজমুদার, শুভেন্দু অধিকারী, অগ্নিমিত্রা পাল, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়দের মতো প্রথম সারির নেতারা এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশের মতে, ছাব্বিশের ভোটের আগে এই গ্রাম চলো কর্মসূচির মাধ্যমে নিচুস্তরে সংগঠনের শক্তি বুঝে নিতে চাইছে বিজেপির শীর্ষ নেতারা। কিন্তু সংগঠনের যা হাল, তাতে এই কর্মসূচি কতটা সফল হবে, সেটা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে।