• পরিত্যক্ত শিশুকে বাঁচালেন ভবঘুরে, একরত্তির কঠিন অসুখ, তাই কি মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন বাবা-মা?
    এই সময় | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, শিলিগুড়ি: রাস্তায় ফেলে দেওয়া অসুস্থ সদ্যোজাত 'প্রাণ' পেল ভবঘুরের হাত ধরে। শুক্রবার অমানবিকতার পাশাপাশি মানবিকতারও নজির তৈরি করল শিলিগুড়ি।

    প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, এক ভবঘুরে মাটিগাড়া এলাকার একটি নার্সিংহোমের সামনের রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ব্যাগের ভিতর থেকে শিশুর কান্না শুনতে পান। তিনি ব্যাগটি হাতে নিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে সোজা হাজির হন শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়িতে হিলকার্ট রোডের পাশে হনুমান মন্দিরে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের সামনে ঝোলাটি রেখে ওই ভবঘুরে জানতে চান, এ বার তাঁর করণীয় কী? স্থানীয়রা ভবঘুরের হাতের ঝোলার মধ্যে ক্রন্দনরত শিশুর অস্তিত্ব টের পেয়ে হকচকিয়ে যান।

    তখনই খবর দেন প্রধাননগর থানায়। মুহূর্তে পুলিশও হাজির হয় ঘটনাস্থলে। সেই ভিড়ের মধ্যে উপস্থিত এক মহিলা রোশনি খাতুনকে ব্যাগ খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশের নির্দেশে ব্যাগের চেন খোলার পরে দেখা যায়, ব্যাগের মধ্যে কাপড় দিয়ে জড়ানো রয়েছে একটি সদ্যোজাত। শিশুটির মাথার পিছনে চোট রয়েছে। রোশনি শিশুটির হাত ধরে নাড়াতেই সে ফের কেঁদে ওঠে।

    পুলিশের অনুমান, সম্ভবত ব্যাগে ভরে রাস্তার পাশে ছুড়ে ফেলার সময়েই জখম হয় শিশুটি। পুলিশ তাকে নিয়ে যায় শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা শিশুটিকে সিসিইউতে নিয়ে পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, মাথাটি আকারে অস্বাভাবিক বড়। মাথায় জল জমে রয়েছে। সেটাই সম্ভবত শিশুটির অসুখ। চিকিৎসকদের পরিভাষায় 'হাইড্রোসেফালাস'। মায়ের পেটে থাকার সময়েই শিশু এই জটিল রোগে আক্রান্ত হয় বলে অনুমান চিকিৎসদের।

    শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগের চিকিৎসক এস মণ্ডল বলেন, 'শিশুটি হাইড্রোসেফালাসে আক্রান্ত। মাথায় জল জমে রয়েছে। খুব ভালো করে চিকিৎসা করানো দরকার। সেই জন্যই পুলিশকে বলেছি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের শিশুদের সার্জারি বিভাগের ভর্তি করানোর জন্য।' তবে কে, বা কারা শিশুটিকে এ ভাবে ব্যাগে ভরে রাস্তায় ফেলে গেল সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। ভবঘুরেকে আটক করেছে পুলিশ। কেননা, ভবঘুরের বয়ান অনুযায়ী মাটিগাড়া এলাকার নার্সিংহোমটি চিহ্নিত করতে চায় তদন্তকারীরা। তার পরে নার্সিংহোমকে ধরে শিশুর বাবা-মায়ের হদিশ বার করার চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি, ভবঘুরে নিজের সিদ্ধান্তেই ব্যাগটিকে মাটিগাড়া থেকে শিলিগুড়িতে নিয়ে এল, না কি কেউ তাঁকে এই পরামর্শ দেয়, সেটাও খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ।

    তবে পুলিশের এই মানবিক চেহারায় বেজায় খুশি স্থানীয়রা। রোশনি বলেন, 'লোকের বাড়িতে ঠিকে কাজ করি। মাল্লাগুড়ি হনুমান মন্দিরের সামনে ভিড় দেখে ওখানে দাঁড়িয়েছিলাম। এতটুকু শিশু! পুলিশের কথায় ওকে হাসপাতালেও নিয়ে যাই। এত খারাপ লাগছিল বাচ্চাটাকে দেখে। পুলিশকে বলেছি, ওর বাবা-মাকে খুঁজে ফাঁসিতে ঝোলাক। এত নিষ্ঠুর কী করে হয়?'

  • Link to this news (এই সময়)