বিশ্বরূপ বিশ্বাস, ইসলামপুর
এ বাজারে কিছুই বিকিকিনি হয় না। অথচ, পছন্দ মতো যে যাঁর জামাকাপড় নিয়ে বাড়িও ফেরেন। ‘ভালোবাসার বাজার’ প্রতি মাসে বিভিন্ন গ্রামে বসে। দুঃস্থরা বাজারে এসে বিনে পয়সায় পরনের কাপড়, জামা, প্যান্ট নিয়ে যান। সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা ভেবে বাজারের ব্যবস্থা করেছে দার্জিলিংয়ের ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিধাননগর ব্লাড ডোনার অর্গানাইজেশন।
গত মাসে এমনই বাজার বসেছিল দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের শীতভিটা গ্রামে। শুধু শীতভিটা গ্রামের মানুষই নন, পার্শ্ববর্তী তিনটি গ্রামের মানুষও এসেছিলেন বাজারে। প্রায় চারশো জন দুঃস্থ তাঁদের পছন্দমতো জামাকাপড় নিয়ে যান। সংস্থার অন্যতম সদস্য সুমনা মণ্ডলের কথায়, 'সাধারণ মানুষ সহযোগিতা করলে ভবিষ্যতে দুঃস্থদের জন্য আরও অনেক কিছু করতে পারব। কোনও সহৃদয় ব্যক্তি ব্যবহারযোগ্য জামাকাপড় দিলে আমরা সঠিক গ্রামে ফের বাজার বসাতে পারব।'
ফাঁসিদেওয়া ব্লকে মূলত চা ও আনারস শ্রমিকের বসবাস। অর্থের অভাবে অনেকে বছরে একটা ভালো জামাকাপড় কিনতে পারেন না। তাঁদের কথা ভেবে পুরোনো জামাকাপড় জোগাড় করেন সংস্থার সদস্যরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের পোস্ট দেখে প্রচুর মানুষ তাঁদের জামাকাপড় পাঠিয়ে দেন সংস্থার ঠিকানায়। আবার বাড়ি গিয়েও সংগ্রহ করা হয়। এর পর বাছাই করে প্রতি মাসে ভিন্ন ভিন্ন গ্রামে জামাকাপড় নিয়ে সংস্থার সদস্যরা পৌঁছে যান। ঠিক বাজারের মতোই জামাকাপড় সাজানো থাকে। সেখানে গ্রামের কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বয়স্করা হাজির হয়। সবাই নিজের পছন্দমতো জামাকাপড় নিয়ে যায়। নতুন নয়, তবে নতুনের মতো পোষাক পেয়ে মুখে হাসি ফোটে গ্রামের মানুষদের।
সংস্থার কর্ণধার, কলকাতা পুলিশের কর্মী বাপন দাস বলেন, 'ছুটি পেলেই বাড়ি এসে ওই মানুষদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো আর খারাপ দু'টো দিকই আছে। ভালো লাগে, যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার সঙ্গে প্রচুর মানুষ এগিয়ে আসে। যেহেতু এই ব্লকেই বড় হয়েছি তাই নিজের চোখে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষদের কষ্ট দেখেছি। তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতেই আমাদের সংস্থার এই উদ্যোগ।'
শীতভিটা গ্রামের বাসিন্দা মন্টু কিসকু বলেন, 'আমরা দিন আনি দিন খাই। ভালো জামাকাপড় কেনার সাধ্য আমাদের নেই। কিন্তু কয়েক মাস পর পর এই ভালোবাসার বাজার আমাদের গ্রামে বসে। বাজার থেকে পাওয়া পোষাকে স্ত্রী ও বাচ্চারা খুশি হয়।'