• ‘দাঙ্গা বাধাতে চাইছে বিজেপি ও আরএসএস’, রাজ্যবাসীর কাছে শান্তির আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর
    প্রতিদিন | ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলায় দাঙ্গা বাধানোর ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি ও আরএসএস। মিথ্যা প্রচার চালিয়ে পরস্পরের মধ্যে বিভেদের তৈরি করতে চাইছে। বিজেপি ও আরএসএসের পাতা এই বিপজ্জনক ফাঁদে পা না দিয়ে রাজ্যবাসীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী আবেদন জানালেন রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার। পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণ এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, ‘সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে, পরস্পরের ব্যাপারে সহমর্মী ও যত্নশীল হতে হবে।’

    ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনাকে হাতিয়ার করে গত কয়েকদিন ধরে গোটা রাজ্যে বিজেপি মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। এই উত্তপ্ত পরিবেশে রাজ্যবাসীর কাছে শান্তির আর্জি জানিয়ে এক লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি ও আরএসএসের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘বিজেপি এবং তাদের সঙ্গীরা পশ্চিমবঙ্গে হঠাৎ খুব আক্রমণাত্মক হয়েছে। এই সঙ্গীদের মধ্যে আরএসএস-ও আছে। আমি আগে আরএসএস-এর নাম নিইনি, কিন্তু এবার বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে যে, রাজ্যে যে কুশ্রী মিথ্যার প্রচার চলছে তার মূলে তারাও আছে। প্ররোচনার সূত্রে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতটিকে এরা ব্যবহার করছে। ব্যবহার করছে বিভেদের রাজনীতি করার জন্য। এরা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’-এর খেলা খেলতে চায়। এ খেলা বিপজ্জনক।’

    রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকার আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নিন্দা করি এবং তাদের রুখবই। দাঙ্গার পিছনে আছে যে দুর্বৃত্তরা, তাদের কড়া হাতে দমন করা হচ্ছে। কিন্তু, সেইসঙ্গেই, পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণও আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে, পরস্পরের ব্যাপারে সহমর্মী ও যত্নশীল হতে হবে।’ বিজেপি ও তার সঙ্গীরা যে এর নেপথ্যে রয়েছে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ‘রাম নবমী দিনটিকে বেছে নিয়ে ওরা চেয়েছিল আগুনের খেলা খেলতে তবে তা ব্যর্থ হয়েছে। ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কিছু বিষয়কে ব্যবহার করতে চায়।’

    মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘দাঙ্গা যারা ঘটায়, তারা হিন্দুও নয়, তারা মুসলমানও নয় দাঙ্গা বাধায় দুর্বৃত্তরা। সব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড়া হবে না।’ পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে তাও তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তুলে ধরেছেন, বাংলার সম্প্রীতির ঐতিহ্য—দুর্গাপুজো, ঈদ, গঙ্গাসাগর মেলা থেকে বড়দিন—সব উৎসব একসঙ্গে উদ্‌যাপন করার চিত্র। একইসঙ্গে তুলনা করেছেন উত্তরপ্রদেশ, মণিপুরের পরিস্থিতির সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে বাংলায় হিংসা ও দাঙ্গা ছড়ানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। বাংলার মানুষের মধ্যে ভাগাভাগি তৈরি করতে চাইছে।

    চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘ঈর্ষার কোনও ওষুধ নেই। হিংসুটে লোকেরা তাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিপথের বাইরে যেতে পারে না। চাকরি, উন্নয়ন, সৃজনশীলতা, কিছুই ওই বিরোধীরা চায় না বা দিতে পারে না। ওদের একমাত্র উদ্দেশ্য মূল্যবৃদ্ধি, ওষুধের দাম বাড়ানো, হাসপাতালের খরচ এবং বিমার ব্যয় বাড়ানো, পেট্রল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে যাওয়া। জীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোই ওদের লক্ষ্য, তাই তারা বিভেদকামী প্রচারের আগুন জ্বালাতে চায়।’ সবশেষে রাজ্যবাসীকে শান্ত ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আর্জি জানিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘জনগণমন’ গান স্মরণ করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘মিথ্যা সাম্প্রদায়িক প্রচারে বিপথগামী হবেন না। আসুন, আমরা মিলেমিশে একজোট হয়ে থাকি এবং ওদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়ি। ওদের গুন্ডামি ও মিথ্যার বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে। ভারতীয় হিসেবে আমাদের একত্র থাকতে হবে।’
  • Link to this news (প্রতিদিন)