• মুর্শিদাবাদে গোলমালের ঘটনায় সাংগঠনিক তদন্ত শুরু করল তৃণমূল, প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে শান্তি ফেরানোর চেষ্টায় শাসক
    আনন্দবাজার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, সুতি, ধুলিয়ান, শমশেরগঞ্জ এবং ফরাক্কা এলাকায় গোষ্ঠীসংঘর্ষের ঘটনায় জেরবার রাজ্য প্রশাসন। ওই সমস্ত অশান্ত এলাকায় দ্রুত শান্তি বহাল করতে এবং গোলমালের প্রকৃত কারণ জানতে এ বার সাংগঠনিক তদন্ত শুরু করল শাসক তৃণমূল। তবে তা লোক জানাজানি করে নয়। চলতি সপ্তাহে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে ওই সমস্ত এলাকায়। ওই প্রতিনিধিদলের মূল লক্ষ্য, দল এবং প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে অশান্ত এলাকায় শান্তি বহাল করার পাশাপাশি ঘটনার ‘সত্যতা’ সাংগঠনিক ভাবে দলকে জানানো।

    মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা এলাকায় এলাকায় গিয়ে দলেরই সমস্ত গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বৈঠক করছেন। গোলমালের ঘটনার নেপথ্যে দলের কোনও নেতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগ রয়েছে কি না, সেই বিষয়টি জানতে চান তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

    এমন প্রচেষ্টার কারণ কী? তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, গোলমালের ঘটনার শুরু থেকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানার এবং বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। সব ক্ষেত্রেই দলের এক গোষ্ঠীর নেতারা অন্য গোষ্ঠীর নেতার বিরুদ্ধে বলেছেন এবং বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর উপর যাবতীয় দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতি দেখেই দলের তরফে মুর্শিদাবাদের উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গেও নিরন্তর যোগাযোগ রেখে শান্তি ফেরাতে কী কী পদক্ষেপ করা সম্ভব, সেই বিষয়েও ওই প্রতিনিধিদলকে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সেই সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করতে পারবেন ওই প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা।

    দলের নেতা এবং পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে পদক্ষেপ করার পাশাপাশি এলাকায় এলাকায় যে সমস্ত শান্তি কমিটির বৈঠক হবে, সেই বৈঠকগুলিতেও ওই প্রতিনিধিদলের সদস্যদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বড় কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করার পরে তা প্রশাসন মারফত কার্যকর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের এক শীর্ষনেতার তরফে। যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া দলের শীর্ষনেতারা মুর্শিদাবাদ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করছেন না, তাই প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও দূরত্ব রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কলকাতায় ফিরে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ আকারে জানাতে হবে ওই প্রতিনিধিদের।

    মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘দল যদি কোনও সাংগঠনিক তদন্ত শুরু করে থাকে, তা অবশ্যই এই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি ভাল সিদ্ধান্ত। কারণ, আমাদের জেলার নেতারা সব সময়ে পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণ করতেই ব্যস্ত থাকেন। তাই বিষয়টি গভীরে গিয়ে জানতে হলে দলকে একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলতে হবে। দলের নিজস্ব সাংগঠনিক তদন্ত হলেই মুর্শিদাবাদ জেলার নেতাদের ভূমিকার কথা শীর্ষ নেতৃত্ব ভাল ভাবে বুঝতে পারবেন।’’ প্রসঙ্গত, ধুলিয়ান পুরসভার চেয়ারম্যান ইনজামামুল ইসলামের একটি বক্তৃতার ভিডিয়ো ওই ঘটনার সময় ভাইরাল হয়েছিল। গোলমালের ঘটনার সময় তাঁর এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর সিসিটিভি ‘ফুটেজ’ও ভাইরাল হয়েছে। পাশাপাশি, শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম, ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম ও তাঁর দাদা-সহ বেশ কিছু তৃণমূল নেতার নাম ওই গোলমালের ঘটনায় উঠে আসছে। সব দিক বিবেচনা করেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব আলাদা প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে ওই ঘটনার সাংগঠনিক তদন্ত শুরু করেছেন। এখন দেখার, কাজ শেষ করে ফিরে প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা কী রিপোর্ট দেন এবং তার ভিত্তিতে শাসকদল কী কী পদক্ষেপ করে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)