• চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকার অধিকাংশই এলেন না স্কুলে!
    এই সময় | ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: সুপ্রিম কোর্ট ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকাদের স্কুলে গিয়ে ক্লাস নেওয়ার সুযোগ দিলেও শনিবার রাজ্যের স্কুলগুলিতে ওই শিক্ষক–শিক্ষিকাদের অধিকাংশ গরহাজিরই রইলেন। যাঁরা স্কুলে এসেছেনও, কোনও রকমে ক্লাস নিয়েছেন, অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগের ছাপ ছিল চোখেমুখে।

    বরং পূর্ব ঘোষণা মতো শনিবার জেলায় জেলায় ডিআই অফিসের সামনে বিক্ষোভে সামিল হন তাঁরা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ‘যোগ্য-অযোগ্য’ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ‘অযোগ্য’-দের টার্মিনেট করে ‘যোগ্য’দের হাতে তুলে দিতে হবে সার্টিফায়েড কপি।

    চলতি সপ্তাহে অনেকগুলি ছুটি ছিল। শুক্রবার ছিল গুড ফ্রাইডে। প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল সংক্রান্ত ৩ এপ্রিলের সুপ্রিম–রায়ের মডিফিকেশন চেয়ে এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে মিসলেনিয়াস অ্যাপ্লিকেশন ফাইল করেছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।

    তার প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট ভাবে ‘টেন্টেড প্রমাণিত হননি’— এমন শিক্ষক–শিক্ষিকাদের আপাতত স্কুলে ফেরার অনুমতি দেয় শীর্ষ আদালত। কিন্তু এ দিন খুব কম সংখ্যক চাকরিহারাই স্কুলমুখো হয়েছেন। তাঁদের মঞ্চের তরফে অমিতভূষণ ভুঁইয়া বলেন, ‘জেলায় জেলায় কর্মসূচিতে ছিলেন যোগ্য শিক্ষকরা। যতক্ষণ না আমাদের যাবতীয় দাবি মানা হচ্ছে ততক্ষণ স্কুলে যাব না। সোমবার এসএসসি অভিযান রয়েছে। মঙ্গলবার হবে রাজভবন অভিযান।’

    এই অবস্থায় পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর-১ ব্লকের খুটিয়া গোকুলপুর বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের চাকরিহারা ৬ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ২ জন এসেছিলেন স্কুলে। নরায়ণগড়ের ভদ্রকালী হাইস্কুলে ৫ জনের কেউই আসেননি। জেলার মৌপাল হাইস্কুল, ব্যানার্জিডাঙা হাইস্কুল, পিংবনি হাইস্কুল, কেশপুর লক্ষ্মী–নারায়ণ হাইস্কুলেও চাকরিহারা কোনও শিক্ষক আসেননি। তাঁরা মেদিনীপুর শহরে মিছিল করেন।

    পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির কলাগেছিয়া জগদীশ বিদ্যাপীঠের চাকরিহারা ৯ জনেরও কেউ স্কুলে আসেননি। দিঘা দেবেন্দ্রলাল হাইস্কুলের ৩ জনের কেউও আসেননি। ঝাড়গ্রামেও বিরিহাণ্ডি বিদ্যাপীঠের ৩ শিক্ষকের কেউও স্কুলমুখো হননি। পড়শুলি ঝাড়েশ্বর হাইস্কুলের ৩ শিক্ষক, রান্টুয়া হাইস্কুলের ৩ শিক্ষক, ঝাড়গ্রাম ননীবালা বালিকা বিদ্যালয়ের চাকরিহারা শিক্ষিকাকেও স্কুলে দেখা যায়নি।

    পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, দুর্গাপুর–আসানসোলেও ছবিটা প্রায় একই রকম। বর্ধমানের রথতলা মনোহরদাস বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের চাকরিহারা ২ শিক্ষক আজও স্কুলে আসেননি। আদালতের দ্বিতীয় রায়ের পরে এখন বেতন কী ভাবে হবে, সে বিষয়েও কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা আসেনি। সোমবার ডিআই অফিসে গিয়ে কথা বলব।’

    ডিআই দেবব্রত রায় বলেন, ‘শিক্ষা দপ্তর থেকে এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি বেতনের বিষয়ে।’ আসানসোলের প্রায় সাড়ে চারশো চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকার মধ্যে সামান্য কয়েক জন স্কুলে এসেছেন। রানিগঞ্জের বাসন্তী দেবী বিদ্যালয়ে চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১২। এ দিন ফিজিক্যাল সায়েন্সের একমাত্র শিক্ষিকা স্কুলে এসেছিলেন। বাকি ১১ জনই আসেননি। চেলিডাঙ্গা হাইস্কুলের কাজ হারানো ২ জন শিক্ষক–শিক্ষিকাও গরহাজির থেকেছেন।

    উত্তরবঙ্গের ছবিটাও প্রায় একই রকম। আলিপুরদুয়ার জেলার কোনও স্কুলেই কাজে যোগ দেননি চাকরিহারারা। শিক্ষাকর্মীদেরও অনেকে কর্মচ্যুত হয়েছেন। বেশিরভাগ স্কুলে প্রধান শিক্ষকদেরই স্কুল খোলা, ঘণ্টা বাজানো ও নোটিস বিলির কাজ করতে হয়েছে। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি হাইস্কুলের ৪ চাকরিহারা শিক্ষকের মধ্যে এসেছিলেন মাত্র একজন। তবে তিনি খাতায় সই করেননি।

    উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন হাইস্কুলের কম্পিউটার এবং কেমিস্ট্রির চাকরিহারা ২ শিক্ষক-শিক্ষিকাও স্কুলে আসেননি। দেগঙ্গার চৌরাশি হাইস্কুলের চাকরিহারা ৫ শিক্ষকের মধ্যে ৩ জন অবশ্য স্কুলে আসেন। পুরুলিয়ার শান্তময়ী গার্লস হাইস্কুলে এক শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন। ওই শিক্ষিকা স্কুলে এসেছিলেন। পঞ্চকোটরাজ হাইস্কুলের চাকরি হারা শিক্ষকও স্কুলে আসেন, ক্লাসও নেন।

  • Link to this news (এই সময়)