• ভান্ডিগুড়ি চা বাগানে চিতাবাঘের সঙ্গে লড়াই, আশঙ্কাজনক শ্রমিক
    বর্তমান | ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: ঘড়িতে তখন শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ভান্ডিগুড়ি চা বাগানে সবে কাজ শুরু হয়েছে। বাগানের ৬০ নম্বর সেকশনে কীটনাশক স্প্রে করছিলেন বছর চল্লিশের ঝুটুং ওরাওঁ। এমন সময় ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পেল্লাই সাইজের একটি চিতাবাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর উপর। আচমকা চিতাবাঘের হামলায় খানিকটা ঘাবড়ে যান ওই শ্রমিক। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। কয়েক মিনিট ধরে রীতিমতো চিতাবাঘের সঙ্গে তাঁর লড়াই চলে। পাশেই বাগানের অন্য সেকশনে তখন পাতা তোলার কাজ চলছিল। বিষয়টি টের পেতেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেন বাকি শ্রমিকরা। এরপরই চিতাবাঘটি ঝুটুংকে ছেড়ে দিয়ে বাগানের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চিতাবাঘের হামলায় মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন ওই চা শ্রমিক। তাঁর গলায় থাবা বসিয়ে মাংস খুবলে নিয়েছে চিতাবাঘটি। ঘটনার পর গুরুতর জখম ওই শ্রমিককে উদ্ধার করে দ্রুত জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কিছুটা চিকিৎসার পর রেফার করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে। ওই শ্রমিকের চিকিৎসার খরচ বহনের আশ্বাস দিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ। 

    এদিকে, ঘটনার জেরে এদিন ভান্ডিগুড়ি চা বাগানে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। বাগানে খাঁচা পাতা হয়েছে। সেইসঙ্গে পাহারায় রয়েছেন বনকর্মীরা। বনদপ্তরের বেলাকোবার রেঞ্জার চিরঞ্জিৎ পাল বলেন, চিতাবাঘটি ধরতে ভান্ডিগুড়ি চা বাগানে খাঁচা পাতা হয়েছে। সেইসঙ্গে আমরা পাহারা দিচ্ছি। রাতেও কর্মীরা পাহারা দেবেন। শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে এদিন দুপুরে জখম ওই শ্রমিকের অস্ত্রোপচার হয়েছে।

    ভান্ডিগুড়ি চা বাগানের শ্রমিক বরুণ ভূমিজ বলেন, ঝুটুং ওরাওঁয়ের শ্যালিকার বিয়ে। স্ত্রী সঙ্গীতা ওরাওঁ এই বাগানেরই কর্মী। কিন্তু জলপাইগুড়ির ডেঙ্গুয়াঝাড়ে বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ায় সঙ্গীতা এদিন বাগানে কাজে আসেননি। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ঝুটুংয়েরও বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কে জানত, এমন বিপত্তি হবে।

    শ্রমিকদের অভিযোগ, ভান্ডিগুড়ি চা বাগানে এবারই প্রথম যে চিতাবাঘ দেখা গেল তা নয়। গত ১৫ এপ্রিলও এক শ্রমিক দাবি করেন, বাগানের ঝোপের আড়ালে তিনি চিতাবাঘ দেখতে পেয়েছেন। তারপরও চিতাবাঘ ধরতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অমল নায়েক নামে এক শ্রমিকের অভিযোগ, বনদপ্তরের তরফে অনেক আগে খাঁচা দেওয়া হলেও তা এক কোণে ফেলে রাখা হয়েছিল। চার দিন আগে যখন বাগানে চিতাবাঘ দেখা গেল, তারপরও যদি ছাগলের টোপ দিয়ে খাঁচা পাতা হতো, তাহলে এই বিপদ হতো না। 
  • Link to this news (বর্তমান)