অজয় নদে বিস্ফোরণের মাধ্যমে তোলা হচ্ছে পাথর, আতঙ্কিত চিত্তরঞ্জনবাসী
বর্তমান | ২০ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অজয় নদের তলদেশ থেকে তোলা হচ্ছে পাথর। তার জেরে আতঙ্কিত রেল শহর চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দারা। এই শহরের শ্মশানের অদূরে এই কর্মকাণ্ড চলছে। বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে বৈদ্যুতিক চুল্লি। বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়ে শনিবার সরেজমিনে তদন্তে নামে রেল প্রশাসন। আরপিএফকে নিয়ে রেলের শীর্ষ আধিকারিকরা অজয় নদে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। যদিও প্রশাসনিক আধিকারিকদের আসার খবরে অবৈধ পাথর কারবারিরা আগেই পালিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে আধিকারিকরা দেখতে পান কীভাবে নদে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর খাদান গড়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকায় অবৈধ পাথর খাদান ও ক্র্যাশার চলার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ার পর জেলাশাসক রিপোর্ট তলব করেছিলেন। এখন দেখার রেল প্রশাসনের তৎপরতায় কতটা নিয়ন্ত্রণে আসে প্রকৃতি ধ্বংস করে অর্থ রোজগারের এই খেলা। সিএলডব্লুর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক তথা ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার উত্তমকুমার মাইতি বলেন, আরপিএফকে সঙ্গে নিয়ে রেলের আধিকারিকরা পুরো এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এখানে কাউকে দেখতে না পাওয়া গেলেও নদে পাথর খাদান গড়ার প্রমাণ মিলেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হবে। সালানপুরের বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাস বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে অবশ্য বিষয়টি গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিডিও বলেন, তদন্ত করা হবে। বিএলএলআরওর কাছে রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে। অজয় নদের তীরে গড়ে উঠেছে রেলশহর চিত্তরঞ্জন। নদের পাশে রয়েছে শ্মশান। সাম্প্রতি এই এলাকাতেই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অজয় নদের একাংশ ঘিরে দিয়েছে পাথর কারবারিরা। নদের তলদেশে কালো পাথর তোলার জন্য সেখানে বিস্ফোরণ করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের জেরে শ্মশানের চুল্লি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। বিস্ফোরণের তীব্রতায় কেঁপে উঠছে চিত্তরঞ্জনের মাটিও। বিষয়টি রেল প্রশাসনের কানে আসে। তারপরে উচ্চপর্যায়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। সালানপুর ব্লকের একাংশজুড়ে পাথর কারবারিদের দাপট সকলেই জানে। অজয় নদের পাড় বরাবর একাধিক পাথর খাদান গড়ে উঠেছে। এখান থেকে পাথর তুলে স্থানীয় ক্র্যাশারে ভাঙা হয়। তার বেশিরভাগ অনুমোদনহীন। পাথর ক্র্যাশারের একাধিক শ্রমিক সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত। মাফিয়াদের অবৈধ কারবার নিয়ে ‘বর্তমান’-এ ধারাবাহিক খবরের জেরেই জেলাশাসক ব্লক প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিলেন। অভিযোগ তারপরেও এই কারবারে রাশ টানা যায়নি। এনিয়েও এলাকাবাসীর মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। বিজেপির যুব মোর্চার জেলা সভাপতি বাবন মণ্ডলের বাড়ি ওই এলাকাতেই। তিনি বলেন, সাংগঠনিক নির্বাচন চলছে তাই আন্দোলন করা যায়নি। আমরা শীঘ্রই এই নিয়ে আন্দোলন নামব। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও পুলিসের সহযোগিতাতেই এই কারবার চলছে। সালানপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সাধারণ সম্পাদক ভোলা সিং বলেন, ওখানে দু’টি বৈধ পাথর খাদান আছে বলে জানি। বিজেপি মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমরা কোনও অবৈধ কারবারকে প্রশ্রয় দিই না।