ডোমকলে দুঃস্থ হিন্দু যুগলের ‘স্বপ্নপূরণ’, ধুমধাম করে বিয়ে দিলেন মুসলিম যুবকরা
বর্তমান | ২০ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, ডোমকল: শিমুল আর শিউলি! দু’জনের বাড়িই বীরভূমে। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কাজ করেন ডোমকলের একটি ইটভাটায়। ছোট থেকেই দুই পরিবারের মধ্যে তাঁদের বিয়ের কথা ছিল পাকা। তবে দুই পরিবারের লোকেদের ইচ্ছে ছিল নিজেদের আলো-আঁধারী জীবনে সন্তানদের বিয়েটুকু অন্তত একটু সাড়ম্বরের সঙ্গে সম্পূর্ণ করার। কিন্তু ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে ওই স্বপ্ন ছোঁয়া প্রায় অসাধ্য ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই স্বপ্নই পূরণ হল। খবর পাওয়া মাত্রই এগিয়ে এলেন ইটভাটার মালিক থেকে আশপাশের মুসলিম গ্রামবাসীরা। হিন্দু রীতি মেনে নিজেদের খরচেই ওই যুগলের বিয়ে দিলেন তাঁরা। একেবারে ধুমধাম করে হল বিয়ে। বাজল ডিজে। চলল ভূরিভোজ। শুক্রবার এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন ডোমকলের ভাতশালা এলাকার বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শিউলি ভূঁইমালির বাড়ি বীরভূমের মুরারই থানা এলাকার ভাতেশ্বর এলাকায়। আর শিমুলের বাড়িও ওই একই থানা এলাকার পাশের গ্রামে। তাঁরা দু’জনেই পরিবারের লোকের সঙ্গে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ভাতশালার একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। ছোট থেকেই দু’জনের সঙ্গে বিয়ের কথা পাকা করে ফেলেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। দু’জনেরই সাধ ছিল একটু ধুমধাম করে বিয়ে করার। কিন্তু সামান্য রোজগারে সেই সাধ পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। কোনওভাবে বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে আসেন ইটভাটার মালিক মোস্তফা শেখ। এগিয়ে আসেন গ্রামের অন্যান্য মুসলিম যুবকরাও। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেন, ধুমধাম করেই ইটভাটার মধ্যে ওই যুগলের বিয়ে দেওয়া হবে। সেই মোতাবেক শুক্রবার রাতেই শুরু হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। বাহারী আলোয় দিয়ে সাজানো হয় ইটভাটার আশপাশ। শুক্রবার রাতে কালীতলার একটি মন্দিরে তাঁদের নিয়ে গিয়ে হিন্দুরীতি অনুসারে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে শেষে চলে ভুরিভোজ। বাজে ডিজে। নব দম্পতিকে উপহার হিসাবে দেওয়া হয় সোনার অলঙ্কার। আর এতেই বেজায় খুশি ওই যুগলের পরিবার। সাম্প্রদায়িক হানাহানির যুগে হিন্দু যুগলের বিয়েতে মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবকদের এভাবে এগিয়ে আশায় আপ্লুত শহরবাসী। পাত্রী শিউলি ভুঁইমালি বলেন, আমাদের ইটভাটার মালিক ও তাঁর লোকজন এগিয়ে এসে আমাদের স্বপ্নপূরণ করেছেন। এত সুন্দর করে আমাদের বিয়ের আয়োজন করায় আমরা খুব খুশি।
ইটভাটার মালিক মোস্তফা শেখ বলেন, সব জানার পর আমরাই ওদের এভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব দিই। গ্রামের লোকজনও নিজে থেকে এগিয়ে এসেছেন। সবাই মিলে ওদের বিয়ে দিয়েছি। ওরা ভালো থাকুক, সুখী থাকুক, এটাই চাইব। এলাকার সাইদুল শেখ, রফিকুল শেখ বলেন, খুব ভালো লাগছে এভাবে ওই পরিবারগুলির মুখে হাসি ফোটাতে পেরে। ওরা খুব খুশি হয়েছে। এই বাংলায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক সম্প্রীতির এই বন্ধন।