নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ট্রাকে করে।কিন্তু নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ট্রাকের উপর দেওয়া হচ্ছে না কোনও আচ্ছাদন। ফলে চলন্ত ট্রাক থেকে ছাই উড়ছে। সেই ছাই গিয়ে পড়ছে আশপাশের অন্য গাড়ির এবং বাইক চালকদের চোখে। যার ফলে যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ভুগছেন পুরুলিয়া-বরাকর, রঘুনাথপুর-বাঁকুড়া, রঘুনাথপুর-সাঁওতালডিহিরাজ্য সড়কের দু’ধারের বাসিন্দারাও।এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ের গাড়ি আটকে বহু বিক্ষোভ, আন্দোলন হয়েছে। বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন তৃণমূল নেতারাও। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি আজও।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই মূলত জমি ভরাট, জাতীয় সড়ক নির্মাণ,ফ্লাইঅ্যাশ ইট তৈরির কারখানা, সিমেন্ট কারখানা ও ঝাড়খণ্ডের বন্ধ হয়ে যাওয়া কয়লাখনি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ট্রাকে ছাই নিয়ে যাওয়ার সময়ে ভালো ভাবে ঢাকা দেওয়া আবশ্যক। ছাই পরিবহণকারী গাড়িগুলোর পেছনে সর্বদা জলের ঝারি ব্যবহার করতে হবে, ইত্যাদি। কিন্তু সেসব নিয়মের তোয়াক্কা করা হয় না বলে অভিযোগ। মানুষ ছাইয়ের জেরে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে আন্দোলন করে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কিছুদিন সজাগ থাকে।তারপর আবার পুরনো নিয়মেই ফিরে যায়।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক কর্তা অবশ্য বলেন, জলে ভিজিয়ে ছাইডাম্পার বা লরিতে বোঝাই করা হয়। ছাই উড়ে না যায়, সেজন্য গাড়ির উপর ত্রিপল ঢাকা দেওয়া থাকে। যদিও অভিযোগ, তার সত্ত্বেও ছাই উড়তেই থাকে। অনেক সময়ে গাড়ি থেকে ছাইয়ের জল চুঁইয়ে রাস্তায় পড়ে। পরে তা শুকিয়ে হাওয়ায় ওড়ে। ফলে ওই সড়ক দিয়ে বাইক, সাইকেল ও হেঁটে যেতে অসুবিধায় পড়েন সাধারণ মানুষ। এছাড়া প্রতিটি গাড়িই ওভারলোডেড থাকে বলে অভিযোগ। যার ফলে রাস্তার ক্ষতি হয়। ওভারলোডেড থাকার জন্য গাড়িগুলি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলেও পড়ে। ছাই বোঝাই গাড়িগুলির জন্য কার্যত অতিষ্ঠ রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকার মানুষ।
বাঁকুড়া জেলা বিজেপির সহ সভাপতি বাণেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেন, রাতের অন্ধকারে ছাই পরিবহণে মানুষের প্রচুর অসুবিধে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রশাসনকে জানিয়েছি।তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক স্বপন মাহাথা বলেন, যেভাবে ছাই পরিবহণ করা হচ্ছে তাতে এলাকায় দূষণ বাড়ছে।রাতে রাজ্য সড়ক দিয়ে চলাচল আতঙ্কের হয়ে উঠেছে। আমরা এর বিরুদ্ধে বহুবার প্রতিবাদ জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ কিছুটা সজাগ হয়েছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। বিজেপি নেতা বাণেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেন, শুধু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেই নয়, বিভিন্ন কল কারখানা থেকেই এভাবে ছাই পরিবহণ হচ্ছে।বিষয়টি নিয়ে আমরা রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রশাসনকে জানিয়েছি।রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, এনিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ছাই পরিবহণের ক্ষেত্রে আগের থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ অনেক সতর্ক হয়েছে।
চিকিত্সকদের দাবি, ছাইয়ে প্রচুর ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে। ওইসব রাস্তা দিয়ে যাঁরা নিত্য যাতায়াত করেন তাঁদের মাস্ক ও সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। চোখে ছয়-আট বার জলের ঝাপটা দিতে হবে।