বিজেপিই কৃষক-শ্রমিকদের মূল শত্রু, আজ বামেদের ব্রিগেডে লক্ষ কণ্ঠে উঠবে স্লোগান
বর্তমান | ২০ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রামলীলা ময়দানের ছাউনিতে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন জগদীশ বর্মন, জহিরুদ্দিন মিয়াঁ ও আব্দুল মিয়াঁ। তিনজনেই শ্রমজীবী মানুষ। দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে শুক্রবার রাতে কলকাতায় চলে এসেছেন। ব্রিগেডে যেতে হবে যে! ব্যাগে মাথা রেখে শুয়ে আব্দুল বলছিলেন, ‘১০০ দিনের কাজ বহুদিন বন্ধ। লোকের বাড়িতে কাজ করে খেতে হয়। আবাস যোজনার কোনও সুবিধা পাইনি। অবস্থা ভালো নয়। নিজের তাড়নাতেই ব্রিগেডে এসেছি।’ আজ, রবিবার দুপুর ৩টেয় বামেদের শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর-বস্তি সংগঠনের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ। শ্রমকোড বাতিল, ১০০ দিনের কাজ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, চাকরির নিরাপত্তা, বেসরকারিকরণ, ফসলের ন্যায্য মূল্য সহ কেন্দ্রের একাধিক নীতির বিরুদ্ধে জগদীশ-জহিরুদ্দিনদের মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ সেখানে স্লোগান তুলবেন—বিজেপিই কৃষক-শ্রমিকদের মূল শত্রু।
শ্রমজীবীদের এই ব্রিগেড সমাবেশে কেন্দ্রীয় নীতির পাশাপাশি রাজ্য সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হবেন বাম নেতৃত্ব। যুব নেত্রী তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় যুবদের এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি বক্তা তালিকায় নেই বলে মন খারাপ অনেকের। সমাবেশের অন্যতম বক্তা সারা ভারত কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার বলছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার ঘুরপথে জোতদার-কর্পোরেটদের হাত শক্ত করার নীতি নিয়েছে। কৃষক-শ্রমিককে মারার নীতি নিয়েছে। পরিস্থিতি যা, এতে ৩ ভাগের ২ ভাগ কৃষক চাষাবাদ ছেড়ে দেবেন। যার ফলে খাদ্য সঙ্কট তৈরি হবে।’ খেত মজুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ বলেন, ‘ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে আরএসএস মদতপুষ্ট বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির ভয়ানক দিক তুলে ধরব। বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি, শ্রমিক-কৃষকদের ভাতে মারার নীতি ও রাজ্যের দুর্নীতির বিকল্পর কথা বলা হবে।’
ব্রিগেডে বক্তা হিসেবে থাকবেন অনাদি সাহু, অমল হালদার, সুখরঞ্জন দে, নিরাপদ সর্দার, বন্যা টুডু ও মহম্মদ সেলিম। গোটা ময়দান মুড়েছে লাল পতাকায়। মঞ্চের পিছনের বাতানুকূল ঘর থেকে প্রযুক্তিগত কাজকর্ম করা হবে। হাওড়া, শিয়ালদহ, খিদিরপুর সহ মোট ৮টি জায়গা থেকে বেলা ১টায় মিছিল শুরু হবে। শহরজুড়ে এদিন অতিরিক্ত আড়াই হাজার পুলিস মোতায়েন থাকবে। ১১টি জায়গায় পুলিস পিকেট ও ১২টি সহায়তা কেন্দ্র থাকবে। জাতপাত নয়, ভাতের লড়াইকে প্রাসঙ্গিক করতেই মানুষ ব্রিগেডে আসবেন, এমনটাই আশা বামেদের। দক্ষিণ দিনাজপুরের বামকর্মী জগদীশের রাতে খাওয়ার ব্যবস্থা তখনও ঠিক হয়নি। এত অনিশ্চয়তা নিয়ে কলকাতায় চলে এলেন? জবাব মিলল, ‘আশা ছেড়ে দিয়ে লাল ঝান্ডাটা মুড়ে রেখে দিলে চলবে কী করে!’