সমস্ত সরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের জেলাওয়াড়ি তথ্য তলব নবান্নের
বর্তমান | ২০ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর্থিক শৃঙ্খলা বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে নবান্ন। ব্লক স্তর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের অধীনে থাকা সমস্ত সরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করল নবান্ন। দপ্তরগুলির ডরম্যান্ট অ্যাকাউন্টের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। শনিবার ১২টি দপ্তর এবং প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেই বৈঠকেই রাজ্য অর্থ দপ্তর আর্থিক পরিচালনার জন্য পিএফএমএস-৩ সফ্টওয়্যারের পাশাপাশি আরও একটি ‘মডিউল’ নিয়ে আসছে বলে জানানো হয়েছে। সেই মডিউলেই জেলা প্রশাসনকে তাদের অধীনে থাকা প্রতিটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য আপলোড করতে হবে বলেই জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি, অডিট হবে জেলা মিনারেল ফান্ডেরও। জেলাগুলিতে বালি-পাথরের রয়্যালটির তহবিলের হিসেব যাচাই করবে নবান্ন। এই প্রথম এমন ধরনের অডিটের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য। ইতিমধ্যে সেই সিদ্ধান্তের কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, এই তথ্য চাওয়ার অর্থ হল, জেলা স্তরের বিভিন্ন দপ্তরের অধীনে থাকা কোন অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে, তা নখদর্পণে রাখতে চাইছে নবান্ন। এমনিতে জেলা স্তরের সরকারি কাজের জন্য কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে অর্থ দপ্তরের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নিয়মিত আপলোডের লক্ষ্যে নতুন অনলাইন মডিউল চালু করা আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই মত আমলা মহলের।
এছাড়াও, সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন বা বর্ডার এরিয়া ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিকে দ্রুত জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এদিনের বৈঠকে। আবার, জেলাস্তরের জমে থাকা মামলার ক্ষেত্রে যেন কোনও ভাবেই আদালত অবমাননার ঘটনা না ঘটে, সেদিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে। পুকুর বা জলাভূমি বোজানোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যসচিব অবিলম্বে অবৈধ বালি খাদান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও সূত্রের খবর। জমে থাকা মিউটেশন কনভারশনের কাজও দ্রুত শেষ করতে হবে জেলা প্রশাসনকে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী হেল্পলাইন নম্বরে আসা অভিযোগের নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বাড়াতে হবে ফিল্ড ইন্সপেকশনও। ইতিমধ্যে গরমে কালঘাম ছুটছে আম জনতার। এই পরিস্থিতিতে মূলত পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে খরা মোকাবিলায় বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পন্থ। সেই ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পানীয় জল সরবরাহ নিয়েও এখন থেকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরকে। সেই মুহূর্তেই জল জীবন মিশন খাতের টাকা কেন্দ্রের আটকে রাখার বিষয়টিও উঠে আসে এদিনের বৈঠকে। আবার আসন্ন বর্ষায় বাঁধ ভাঙনের ঘটনা এড়াতে সেচ দপ্তরকে এখন থেকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খানাকুল, সুন্দরবনের মতো এলাকায় বিশেষ জোর দিতে বলা হয়েছে। ক্ষুদ্র সেচ দপ্তরকে জলাশয় সুমারির কথাও বলা হয়েছে। নর্দমায় আবর্জনা জমে থাকার কারণে শহর এলাকায় যাতে জল না জমে, সেদিকেও নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। এছাড়াও বর্ষা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে ৫ জুন থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত নবান্নে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের বিশেষ কন্ট্রোল রুম চালু থাকবে বলেও জানানো হয়েছে এদিনের বৈঠকে। পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনেও জোর দেওয়া হবে বলেও এদিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। খোলা জায়গায় যাতে রান্না না হয়, সেদিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, কিছু ক্ষেত্রে সবজির মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে কৃষি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাগুলিকে।