• অন্ধকার মুছে আলো আসবে: রাজ্যপাল
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো মুর্শিদাবাদে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি পুনর্নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে থেকে যাঁরা নিজেদের বাড়ি ফিরছেন, তাঁদের জন্য জরুরি কিছু আসবাবপত্র দিচ্ছে প্রশাসন। সিলিং ফ্যান, টিউব লাইট, সুইচ বোর্ড, সুইচ, টর্চ, বালিশ, বিছানা ইত্যাদি তুলে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে।

    জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদে অশান্তিতে আড়াইশোর বেশি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। শ’খানেক দোকানে ভাঙচুর চলেছে। এই সংখ্যা অবশ্য আরও বাড়তে পারে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আপৎকালীনভাবে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু জরুরি সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনাই প্রশাসনের লক্ষ্য।’

    এই পরিস্থিতিতে দিনকয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে অনুরোধের সুরে বার্তা দিয়েছিলেন, যাতে এখনই কেউ মুর্শিদাবাদ বা মালদহে না যান। তবে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সেই বার্তা ‘উপেক্ষা’ করেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বেরিয়েছেন। শুক্রবার মালদহে যান তিনি। বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর স্কুলের আশ্রয় শিবির সহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখেন রাজ্যপাল। সেখানে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। আর শনিবার মুর্শিদাবাদের নানা এলাকা ঘুরে দেখেন সিভি আনন্দ বোস।

    মুর্শিদাবাদে অশান্তি চলাকালীন নিহত বৃদ্ধ এবং তাঁর ছেলের বাড়িতে গেলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শনিবার সকালে ধুলিয়ান পুরসভার জাফরাবাদে নিহত বাবা-ছেলে হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের বাড়িতে যান তিনি। রাজ্যপালকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃত বৃদ্ধের স্ত্রী। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমার সব হারিয়েছে। আমরা ঘুমোতে পারছি না। আপনি দয়া করে কিছু করুন।’ তাঁদের সান্ত্বনা দেন রাজ্যপাল। আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রথমেই শান্তি ফেরানোর বার্তা দেন সিভি আনন্দ বোস। নিহতের পরিবারকে নিজের ফোন নম্বরও দেন রাজ্যপাল।
    সিভি আনন্দ বোস নিহতদের পরিবারের সদস্যদের বলেন, ‘এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা হবে। ফোন নম্বর দেওয়া রইল। প্রয়োজনে আপনারা সরাসরি ফোন করবেন।’ ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বেরোনোর সময় আশপাশের বাসিন্দারা রাজ্যপালকে তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা জানান।

    প্ল্যাকার্ড হাতে এলাকায় বিএসএফ ক্যাম্প করার দাবি জানাতে থাকেন স্থানীয়রা। বাসিন্দারা অভিযোগের সুরে বলেন, ‘এখনও তাঁদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এলাকা ছেড়ে চলে না গেলে ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’ পীড়িতদের অভিযোগ শুনে রাজ্যপাল বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হবে। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। বিএসএফ ক্যাম্পের বিষয়টি নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলব।’ জাফরাবাদে প্রায় ১৩ মিনিট ছিলেন রাজ্যপাল।

    প্রসঙ্গত, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন ধুলিয়ান পুরসভার জাফরাবাদে বাবা-ছেলের খুনের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় ইতিমধ্যেই পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। মূলচক্রীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি জড়িতদেরও পাকড়াও করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। হিংসার ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেছে রাজ্য। মুর্শিদাবাদের ঘটনায় তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত মোট ২৭৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

    এদিকে শনিবার মুর্শিদাবাদ জেলায় বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের সময় দফায় দফায় বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। জাফরাবাদে খুন হওয়া বাবা-ছেলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে বেতবোনা এলাকার উপর দিয়ে যাচ্ছিল রাজ্যপালের কনভয়। সিভি আনন্দ বোসের গাড়ি বেরিয়ে যেতেই, কনভয়ের বাকি গাড়িগুলির সামনে চলে আসেন স্থানীয়রা। রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। বিক্ষোভ তুলতে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ ও আধাসেনা। বাসিন্দাদের বিক্ষোভের কথা শুনে ডাকবাংলো মোড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে রাজ্যপালের গাড়ি। সেখান থেকে বেতবোনায় ফিরে আসেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বেশ কিছু সময় কথা বলে এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। ধুলিয়ান পুরসভার অন্তর্গত বেশ কয়েকটি এলাকাতেও বিক্ষোভের মুখে পড়ে রাজ্যপালের কনভয়।

    তবে, মালদহ-মুর্শিদাবাদ সফর করে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস মন্তব্য করেছেন, অন্ধকার মুছে আলোর দেখা মিলবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, রাজ্য পুলিশ ও আধাসেনা মোতায়েনের এখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। সেইসঙ্গে স্থানীয়দের দাবিদাওয়া নির্দিষ্ট জায়গায় তিনি জানাবেন বলেও জানিয়েছেন।

    প্রসঙ্গত, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আবহে গত শুক্রবার অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, সুতি, শামসেরগঞ্জ সহ বেশ কিছু এলাকায়। সেই অশান্তির জেরে তিনজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার তদন্তে রাজ্য পুলিশ বুধবার সিট গঠন করেছে। প্রশাসনের উদ্যোগে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জনজীবন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও দোকানের তালিকা প্রস্তুত করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হচ্ছে সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরির কাজ। পাশাপাশি ঘরছাড়া পরিবারগুলিকে ঘরে ফেরাতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)