মুর্শিদাবাদে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে সাংগঠনিক তদন্ত ও শান্তি ফেরানোর চেষ্টা তৃণমূলের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২০ এপ্রিল ২০২৫
মুর্শিদাবাদের হিংসার ঘটনায় তদন্তে নেমেছে প্রশাসন ও গোয়েন্দা বিভাগ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেখানে গিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলতে মালদহের আশ্রয় শিবিরে গিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। এবার সেই গোলমালের ঘটনায় সাংগঠনিক তদন্ত শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস। হিংসার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে দলের তরফে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে একটি প্রতিনিধি দল। তৃণমূলের পাঠানো প্রতিনিধিদল স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সেখানে কাজ করবে। তাঁদের মূল লক্ষ্য, দল ও প্রশাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অশান্ত এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা। ওইসব এলাকায় কীভাবে শান্তি ফিরিয়ে আনা যাবে, কীভাবে ঘরছাড়াদের আতঙ্ক দূর করে ঘরে ফেরানো যাবে, সেবিষয়ে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফেরার পর দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
এলাকায় এলাকায় যে সমস্ত শান্তি কমিটির বৈঠক হবে, সেই বৈঠকগুলিতেও ওই প্রতিনিধিদলের সদস্যদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বড় কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। এরপর প্রশাসন মারফত তা কার্যকর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহে রাজ্য তৃণমূল এই প্রতিনিধিদল পাঠালেও কোনও লোক জানাজানি করা হয়নি। দলের নির্দেশ মতো সেই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এলাকায় এলাকায় গিয়ে দলেরই সমস্ত গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে বৈঠক করছেন। গোলমালের ঘটনার নেপথ্যে দলের কোনও নেতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ আচমকা এই হিংসার ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে চায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত গত এক সপ্তাহ ধরে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, সুতি, ধুলিয়ান, শমশেরগঞ্জ এবং ফরাক্কা এলাকায় গোষ্ঠীসংঘর্ষের ঘটনায় জেরবার রাজ্য প্রশাসন। এই ঘটনায় বিরোধীরা রাজ্যের শাসকদলের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলেছে। হিংসার ঘটনার পর রাজ্যকে পাঠানো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্টে দলের একজন বিধায়কের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। অমিত শাহের দপ্তরের পাঠানো সেই রিপোর্ট কতটা সত্য, তা খতিয়ে দেখতে চায় রাজ্যের শাসকদল। এই রিপোর্টের আদৌ কি কোনও সত্যতা আছে, নাকি নিছক রাজনৈতিক তা নিশ্চিত হতে চাইছে জোড়াফুল শিবির।
এদিকে গোলমালের ঘটনার শুরু থেকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানার এবং বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। সব ক্ষেত্রেই দলের এক গোষ্ঠীর নেতারা অন্য গোষ্ঠীর নেতার বিরুদ্ধে বলেছেন এবং বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর উপর যাবতীয় দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতি দেখেই দলের তরফে মুর্শিদাবাদের উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অন্যদিকে মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক রাজনৈতিক মহলে প্রশ্নের ঝড় উঠেছে। অভিযোগের তীর প্রশাসন থেকে শুরু করে কেন্দ্রের দিকেও। এলাকা উত্তপ্ত, অথচ এতো বড়ো ঘটনার কোনও আঁচই কি পাননি এলাকার জনপ্রতিনিধিরা? সাংসদ, বিধায়ক আশেপাশেই থাকেন। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান, সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস, ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম এই তিনজনেরই বাড়ি রতনপুরে। আবার সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলামের বাড়ি পুঁটিমারি। ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদের নামে এলাকায় যে তান্ডব চলেছে কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও কেউ কোনো খবর পাননি এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
তবে এই প্রতিনিধিদের বক্তব্য, তাঁরা চক্রান্তের শিকার। এর নেপথ্যে কারা রয়েছে, প্রশাসনকে তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য বলা হয়েছে। এমন ঘটনা তাঁরা আগে কখনও দেখেননি। বিন্দুমাত্র আন্দাজ থাকলে এসব কিছুই হতে দিতেন না তাঁরা। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও সচেতন থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রতিনিধিরা। এলাকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দলের কর্মীদের সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে।