সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া
এ বারের বর্ষায় যাতে হাওড়াবাসীকে জমা জলের সমস্যায় ভুগতে না হয়, তাই একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছিল হাওড়া পুরসভা। তার মধ্যে প্রধান কাজ ছিল, বেলগাছিয়া ভাগাড় সংলগ্ন পচাখাল সংস্কার। কিন্তু গত মাসে বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধস নেমে বুজে যায় সেই পচাখাল। আর তাতেই খাল সংস্কারের কাজ শুরু হলেও বারবার শিট পাইলিং ব্যর্থ হতে থাকে। যার ফলে থমকে যায় খাল সংস্কারের কাজ।
এর ফলে, হাওড়া শহরের মূলত বামুনগাছি এলাকায় ফের জল জমতে শুরু করে। শুক্রবারের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সেই জলের উপরে নতুন করে বৃষ্টির জল জমে দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি হয়েছে বামুনগাছি ও বেলগাছিয়া এলাকায়। এ দিনের বৃষ্টি প্রমাণ করে দিয়েছে, বেলগাছিয়া খাল সংস্কার না হলে, এ বছরও ফের বর্ষায় ভুগতে হবে এলাকার মানুষকে।
বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরে চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত জল নামেনি বামুনগাছি, ঘাঁটাপাড়া, রেল কলোনি, প্রফুল্ল সেন কলোনি, হরিশ কলোনি, বিবেক নগর–সহ অন্যান্য জায়গায়। কোথাও হাঁটু সমান, আবার কোথাও গোড়ালি সমান জল জমে আছে। অনেক বাড়ির ভিতরেও জল ঢুকে গিয়েছে। বেশিরভাগ বাড়ির এক তলায় জল।
বামুনগাছি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ভিতরেও জল। জল পেরিয়েই ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যাচ্ছে। তার সঙ্গে অনেক জায়গায় পানীয় জল পর্যাপ্ত নয় বলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ। এমনিতেই কোনা পচাখাল নতুন করে শিট পাইলিং করে খাল খনন করার সময়ে ওই নালায় জল নিকাশি বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এর ফলে, ফের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হতে শুরু করে। তার উপরে বৃষ্টির জল জমে যাওয়ায়, সেই জল অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষকে এর ফলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
বেলতলা গলিতে হোম ডেলিভারি রান্নার হোটেল চালান পূর্ণিমা মালিক। তিনি বলেন, ‘বেলগাছিয়া ভাগাড়ে যে দিন থেকে ধস নেমেছে, তবে থেকে অর্থাৎ ২৪-২৫ দিন আগে থেকেই ওই এলাকায় জল জমে রয়েছে। পুরসভা একবার উদ্যোগী হয়ে কিছুটা জল নামিয়েছিল। কিন্তু আবার জল জমে যায়। আমার হোম ডেলিভারি দোকানের সামনেই হাঁটুসমান জল। ফলে, কেউ দোকানে আসছেন না। ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ। খুবই অসুবিধের মধ্যে দিন কাটছে। পুরসভার আধিকারিকরাও দেখতে আসেন না।’
শ্রীপর্ণা কয়াল নামে এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, পুরসভা থেকে আশ্বাস দেওয়া হয় যে, দু’দিনের মধ্যে বেলগাছিয়া পচাখাল ঠিক হয়ে যাবে এবং দ্রুত জল নেমে যাবে। কিন্তু জল তো নামেইনি, এখন শোনা যাচ্ছে যে, শিট পাইলিংয়ের কাজও সফল হয়নি। কবে শেষ হবে সেই কাজ, তা পুর আধিকারিকরা সঠিক ভাবে কিছু বলতে পারছেন না। এর ফলে তাঁরা আশঙ্কায় রয়েছেন, এই জমা জল তো এখনই নামবে না, এমনকী, বর্ষার আগে আদৌ এই সমস্যার সমাধান হবে কি না, সেটাও এখনও পরিষ্কার নয়।
অন্য দিকে, বেলগাছিয়া ভাগাড়ে এই শিট পাইলিং– এর কাজে যারা নিযুক্ত আছেন তারা জানিয়েছেন, প্রথমের দিকে ১৬ ফুটের যে সিট দেওয়া হয়েছিল তা একটা নির্দিষ্ট গভীর পর্যন্ত গিয়ে আর যাচ্ছিল না। ফলে সেগুলো তুলে ফেলতে হয়েছে। এখন নতুন করে বড় সিট দেওয়া হচ্ছে। আর সে ক্ষেত্রে চেষ্টা করা হচ্ছে, আগে যেখানে মাটিতে কাঠ গেঁথে এই শিট পাইলিং করা হয়েছিল, সেই কাঠগুলো তুলে সেই গর্তে লোহার এই শিটগুলি বসানো যায় কি না।
ইঞ্জিনিয়াররা জানান, যেখানেই শিট পাইলিং–এর কাজ চলছে, নীচে এত প্লাস্টিক এবং অন্যান্য জিনিস জমে রয়েছে যে, সেগুলি ভেদ করে এই লোহার শিটকে ভিতরে ঢোকানো যাচ্ছে না। কী করে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘বেলগাছিয়া ভাগাড়ে শিট পাইলিংয়ের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। খুব তাড়াতাড়ি সেই কাজ শেষ করা যাবে আশা করা যায়। ওই খালে জল নিকাশি শুরু করা গেলে দ্রুত জল নেমে যাবে।’