এই সময়, বোলপুর: বাসে উঠে মনে পড়ল পার্স আনেননি। নো প্রবলেম! কন্ডাক্টার যদি হন বোলপুরের দিলীপ সাউ, তা হলে এগিয়ে দেবেন কিউআর কোড স্ক্যানার। অনলাইনেই কাটতে পারবেন বাসের টিকিট।
চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে বাসের কন্ডাক্টর বছর ষাটের দিলীপ সাউ। এত দিন টিকিটের গোছা নিয়ে যাত্রীদের কাছে ভাড়া চেয়েছেন। শনিবার থেকে টিকিটের গোছার পাশাপাশি কিউআর কোডের স্ক্যানার নিয়েও ভাড়া চাইতে শুরু করেছেন। যাত্রীরা তাঁর ওই ব্যবস্থাপনা দেখে প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হয়েছেন।
পকেটে টাকা থাকলেও পরখ করার জন্য অনেকেই কিউআর কোড স্ক্যান করে ভাড়া মিটিয়েছেন। চায়ের দোকান থেকে নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কিউআর কোডে লেনদেন আগেই চালু হয়েছে। কিন্তু জেলায় এই প্রথম এ ভাবে বাসভাড়া নেওয়া শুরু হলো বলে জানিয়েছেন বাসমালিকরা।
জেলায় বীরভূম জেলা বাসমালিক সমিতি এবং বীরভূম ডিস্ট্রিক্ট বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে দু’টি সংগঠন রয়েছে। ওই দুই সংগঠন সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলায় মোট বাস এবং মিনিবাসের সংখ্যা প্রায় ১৬০০। বীরভূম জেলা বাসমালিক সমিতির সহ–সম্পাদক সুনীলকুমার ঘোষ এবং বীরভূম ডিস্ট্রিক্ট বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক আব্দুল আজিম বলেন, ‘এই মুহূর্তে জেলায় অন্য কোনও বাসে কিউআর কোডের মাধ্যমে ভাড়া নেওয়া চালু হয়নি। সেই হিসাবে তিনিই প্রথম ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছেন। অন্যান্য বাসেও ওই ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করব।’
বোলপুরের মকরমপুরের বাসিন্দা দিলীপ সাউ। ছোট থেকে অন্য বাসে কাজ করলেও ১৯৯৫ নাগাদ নিজেই একটি বাস কেনেন। বাসটি বর্তমানে বোলপুর রুটে চলাচল করে। মালিক হলেও দিলীপ নিজেই প্রথম থেকে বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করেন। ভাড়া নিতে গিয়ে নানা সমস্যার জন্য কিউআর কোডের কথা তাঁর মাথায় আসে বলে জানিয়েছেন দিলীপ।
সেই মতো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে কিউআর কোডের স্ক্যানার এবং স্পিকার নিয়েছেন। স্পিকারটি লাগিয়ে দিয়েছেন বাসের ভিতরে। কিউআর কোডে ভাড়া মেটালেই স্পিকারে শোনা যাচ্ছে ঘোষণা। সেই অনুযায়ী একটি টিকিট কেটে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে।
ওই সুবিধা শুধু চলন্ত বাসেই নয়, বাসস্ট্যান্ডে বাস ছাড়ার আগে কাউন্টারে সিট বুকিংয়ের সময়ও পাওয়া যাচ্ছে। ওই রুটের যাত্রী শুভেন্দু মণ্ডল, অঙ্কুর দাশগুপ্ত, মিতালি চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, ‘ব্যাপারটি দেখে আমরা প্রথমে খুব চমকে গিয়েছিলাম। বাসে এমন একটা ব্যবস্থার কথা আমরা ভাবতেও পারিনি। তাই সঙ্গে ভাড়া দেওয়ার মতো খুচরো টাকা থাকলেও কিউআর কোডেই ভাড়া দিয়েছি। এ বার থেকে কিউ আর কোডেই দেবো।’
দিলীপ বলেন , ‘শুধু খুচরো সমস্যাই নয়, নোট নিয়েও অনেক সময়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা বেঁধে যায়। বহু যাত্রীই ভাড়া দেওয়ার সময়ে ছেঁড়াফাটা নোট দেন। অথচ নেওয়ার বেলায় চান কড়কড়ে নোট। কিছু বলতে গেলে মারমুখী হয়ে ওঠেন। ভাড়া নিয়ে মালিক–কন্ডাক্টরের মধ্যে একটা সন্দেহের আবহ থাকে। কিউআর কোডে ভাড়া নেওয়া হলে সেটা অনেকটাই দূর হতে পারে। তবে সবাই তো এখনও অনলাইন পেমেন্টে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি। তাঁদের জন্য নগদে ভাড়া নেওয়ারও ব্যবস্থা রাখতে হয়েছে।’