এই সময়, কালনা: বড় বড় ঢেউ সামলানো ছিল কঠিন পরীক্ষা। দু’বার চোখের সামনে দিয়ে চলে যায় বড় জাহাজ। দু’বার দূরে দেখা মেলে তিমিরও। তবে সমস্ত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে অনায়াসেই ষষ্ঠ সিন্ধু জিব্রাল্টার প্রণালী পার করেছেন কালনার ‘ধন্যি মেয়ে’ সায়নী দাস।
সাঁতার কাটার সময়ে সায়নীর চোখে পড়েছিল জেলিফিসও। তবে কোনও ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর আক্রমণের মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে। বরং পরিকল্পিত ভাবে সাঁতার কেটে যে সময়ের মধ্যে জিব্রাল্টার প্রণালী পার হওয়ার কথা ছিল, তার থেকে অনেক কম সময়েই লক্ষ্য স্পর্শ করে ফেলেন সায়নী। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২১ এপ্রিল স্পেন থেকে রওনা হয়ে ২২ এপ্রিল সন্ধেয় কালনা শহরের বারুইপাড়ার বাড়িতে পৌঁছনোর কথা সায়নীর।
ইতিমধ্যেই কালনার এই জলকন্যার মুকুটে যুক্ত হয়েছে ইংলিশ চ্যানেল, ক্যাটালিনা চ্যানেল, মলোকাই চ্যানেল, কুক প্রণালী, নর্থ চ্যানেল জয়ের পালক। এ বার যুক্ত হলো জিব্রাল্টার প্রণালী জয়ের স্বীকৃতি। রয়েছে এ বার জাপানের সুগারু চ্যানেল পার হওয়ার পরীক্ষায়। সেই অভিযানেও সাফল্য অর্জন করলে সায়নীর মাথায় উঠবে সপ্তসিন্ধু জয়ের মুকুট। অনুমতি মিললে আগামী বছরেই সুগারু চ্যানেল ক্রস করতে চান তিনি।
শুক্রবার স্পেনের স্থানীয় সময় দুপুর ১.৫৮ মিনিটে সাঁতার শুরু করেন সায়নী। তার সঙ্গে ছিলেন আমেরিকার দুই সাঁতারু রিয়ান উৎসুমি ও সুজানে হাইম। তবে কিছুটা যাওয়ার পরএ সুজানে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর সাঁতার কাটতে পারেননি। স্থানীয় সময় বিকেল ৫.৪৯ মিনিটে লক্ষ্যে পৌঁছে যান সায়নী। সময় নেন ৩ ঘণ্টা ৫১ মিনিটে। তবে আমেরিকার সাঁতারু রিয়ান উৎসুমি জিব্রাল্টার প্রণালী পার করে সপ্তসিন্ধু জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেন।
শনিবার সকালে ফোনে যোগাযোগ করা হলে সায়নী বলছিলেন, ‘এখনও সারা শরীরে ব্যথা রয়েছে। লক্ষ্য ছিল সাড়ে চার ঘণ্টায়এই দূরত্ব অতিক্রম করার। তবে তার থেকে কম সময়েই তা পার হয়েছি। এর জন্য জিব্রাল্টার সুইমিং সংস্থার সহযোগিতা এবং সঙ্গে থাকা দ্রোণাচার্য পুরস্কারে সম্মানিত কোচ তপন পানিগ্রাহীর কিছু পরামর্শ কাজে এসেছে।’
সায়নী জানাচ্ছেন, জিব্রাল্টার প্রণালী পারের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা তৈরি করে বিশাল আকারের ঢেউ। কোন দিক থেকে ঢেউ আসছে, সে সম্পর্কে সতর্ক করছিলেন বোটে থাকা সদস্যরা। কোনও বড় জাহাজ এলেও তাঁরা দূরে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছিলেন সায়নীকে, কোনও সময়ে মন্থর গতিতে সাঁতার কাটার পরামর্শ দিয়েছেন। তার পরেও সামনে দিয়ে দু’বার বড় জাহাজ চলে যায়।
সায়নীর কথায়, ‘সামনে বড় ঢেউ এলে কৌশলে তা সামাল দিয়েছি। সাধারণত এ ক্ষেত্রে অনেকে জল খেয়ে ফেলে। কিন্তু আমি বড় ঢেউ এলেই দম বন্ধ করে মাথা নিচু করে সাঁতার কেটেছি। এখানে হাঙরও প্রচুর রয়েছে, তবে আমি তা দেখতে পাইনি। তবে বোট থেকে গাইডরা দু’বার তিমির পিঠ আর লেজ দেখেছেন আমাকে।’
সায়নী এ বার সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন রিয়ানকে। যা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘পাশে কেউ থাকলে মনোবল অনেকটা বেড়ে যায়। ওর সাহচর্যও ভুলব না।’ এ বার সায়নীর লক্ষ্য ন্যাশনাল ইন্সটিটউট অফ স্পোর্টসে ভর্তি হওয়া। এটি স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার অ্যাকাডেমিক উইং। এক বছরের এই কোর্সে ২০টি আসন থাকে। ফর্ম ফিল আপ করে ফেলেছেন সায়নী। সুযোগ পেলে সেই কোর্স শেষ করতে চান। তার পরে অনুমতির অপেক্ষা।
সবুজ সঙ্কেত মিললেই যে কালনার মেয়ে নেমে পড়বেন সুগারু চ্যানেল অতিক্রম করতে। সপ্তসিন্ধু জয়ের সোনালি হাতছানি কী আর উপেক্ষা করা যায়!