• আমাদের জন্য স্কুলের দরজা কেন বন্ধ, প্রশ্ন শিক্ষাকর্মীদের
    এই সময় | ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, পুরুলিয়া: শীর্ষ আদালতের রায় মেনে যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন। তা হলে তাঁদের জন্য কেন স্কুলের দরজা বন্ধ থাকবে? শনিবার এমনই প্রশ্ন তুললেন পুরুলিয়ার চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা।

    সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে রাজ্যের স্কুলগুলিতে স্বাভাবিক পঠনপাঠন প্রবল সঙ্কটের মুখে পড়েছে। ফলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নতুন রায়ে জানিয়েছিল, যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে। এই নির্দেশের পরে যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের তরফে দ্রুত যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে। শিক্ষাকর্মীদের বক্তব্য, যদি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রে যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা তৈরি হতে পারে, তা হলে কেন শিক্ষাকর্মীদের ক্ষেত্রে সেই তালিকা তৈরি হবে না!

    যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের পুরুলিয়ার কর্মী মলয় মুখোপাধ্যায় স্বীকার করছেন, স্কুলে শিক্ষাদানের প্রশ্নে যেমন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা রয়েছে, পাশাপাশি শিক্ষাকর্মীদেরও সমান অবদান থাকে। বিষয়টি একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। যে কোনও কারণেই হোক, শিক্ষাকর্মীদের দাবি এই আন্দোলনে কিছুটা উপেক্ষিতই রয়ে গিয়েছে।

    পুরুলিয়ার হুড়ার এক স্কুলের শিক্ষাকর্মী স্বপন সিংহ এ দিন বলছিলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যোগ্যতা আদায়ের আন্দোলনে আমাদের দাবি উপেক্ষিতই রয়ে গিয়েছে। হতে পারে আমাদের সংখ্যা কম বলেই হয়তো এমনটা হচ্ছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘প্রথম থেকেই প্রচারের সামনের সারিতে উঠে এসেছে প্রায় ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন। এই সংখ্যার মধ্যে যে শিক্ষাকর্মীরাও রয়েছেন, আলাদা করে সেটাকে কখনওই সামনে আনা হয়নি। হতে পারে, সে কারণেই শীর্ষ আদালতের কাছেও আমাদের বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে। আমার প্রশ্ন, যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মতো যোগ্য শিক্ষাকর্মীদের তালিকা কেন তৈরি করা যাবে না?’

    বলরামপুরের এক স্কুলের শিক্ষাকর্মী নিমাই রাজোয়াড়ের কথায়, ‘শিক্ষাকর্মীদের যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা তৈরির নির্দেশ হয়তো শীর্ষ আদালত দেয়নি, কিন্তু যোগ্য শিক্ষাকর্মীরাও তো একই অবিচারের শিকার। তা হলে কেন একন বৈষম্য হচ্ছে?’ জঙ্গলমহলের একটি ব্লকের এক শিক্ষাকর্মী হেমন্ত কুমার মণ্ডল বলছেন, ‘শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষাকর্মী নিয়োগে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু ১৮ লক্ষ প্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে যাঁরা যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন, তাঁরা কেন অবিচারের শিকার হবেন?’

    আর এক শিক্ষাকর্মীর বাবা শ্রীপতি রুইদাসের মন্তব্য, ‘শিক্ষাকর্মী হিসেবে আমার ছেলে প্রথম সরকারি চাকরি পেয়েছিল। আমি নিজে একটি সাইকেলের দোকানে কাজ করি। ছেলে নিজের যোগ্যতায় এই চাকরি পেয়েছিল। কোনও স্তরে দুর্নীতি হয়েছে বলে যোগ্য শিক্ষাকর্মীরাও শাস্তিভোগ করবেন, এটাই বা কেমন ধরনের ন্যায়?’

    শিক্ষাকর্মীদের তরফে স্বপন সিংহ বলছেন, ‘আমরা সংখ্যায় সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো, তাই হয়তো দাবি উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে। কিন্তু আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি আমরাও নিচ্ছি। আশা করছি, ন্যায় বিচার অবশ্যই পাব।’

  • Link to this news (এই সময়)