বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
কাজী নজরুল ইসলামের নিজস্ব কণ্ঠ–সহ প্রায় ১৯০০ পুরোনো রেকর্ড ডিজিটাইজ় করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত নজরুল সেন্টার ফর সোশ্যাল কালচারাল স্টাডিজ়।
১৯০৯ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত যে পাঁচ হাজার রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছিল, ব্রিটিশ মিউজ়িয়ামের সহযোগিতায় তার মধ্যে ২ হাজার রেকর্ড ডিজিটাইজ়ের কাজ বর্তমানে চলছে বলে শনিবার জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর এবং রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট গৌরব চৌধুরী। এখনও পর্যন্ত ১৮৫৭টি রেকর্ড ডিজিটাইজ় করার কাজ শেষ হয়েছে। জুলাই মাসের মধ্যে পুরো কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে নজরুল সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ়ের কিউরেটর বলেছেন, ‘এই কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি কানন দেবী এক সময়ে জানিয়েছিলেন, সুরাজলাল মুখোপাধ্যায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে ভাবে রেকর্ড সংগ্রহ করেছিলেন, সেগুলি যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজে দারুণ কার্যকরী হবে। এই রেকর্ডগুলি সংগ্রহ করা উচিত। সেই স্বপ্নপূরণের কাজ শুরু হয়েছে।’ তিনি আরও বললেন, ‘এই রেকর্ডগুলির একটি বড় অংশ সুরাজলালের জামাতা অমিত কুমার গুহর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।’
এখনও পর্যন্ত যতগুলি রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে নজরুলের নিজের গলায় করা তিনটি রেকর্ড ‘পাশানের ভাঙালে ঘুম’, ‘রবিহারা’ ও ‘নারী’ কবিতা আছে। নজরুলের লেখা ‘বিদ্রোহী’ কবিতা অনেকেই আবৃত্তি করেছেন রেকর্ড বা ক্যাসেটে, কিন্তু সেই সময়ে গিরিন চক্রবর্তী এই কবিতাকে গানের আকারে উপস্থাপন করেছিলেন, তা অনেকেই জানেন না। এ ছাড়াও কৃষ্ণচন্দ্র দে, আব্বাসউদ্দিন, বেচু দত্ত, শচীন গুপ্ত, শচীন দেব বর্মন, রঞ্জিত রায়, সুকৃতি সেনরাও গেয়েছিলেন। সেই রেকর্ডও সংগ্রহ করা হয়েছে।
রেকর্ড ডিজিটাইজ় করার ক্ষেত্রে কিউরেটরের সঙ্গে রয়েছেন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আসিফ আহমেদ। এ ছাড়াও রয়েছেন বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীতে মাস্টার্স করা শ্বেতা সেন, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে রবীন্দ্রভারতী থেকেই মাস্টার্স করা সঞ্চারী মালিক। রয়েছেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগ থেকে মাস্টার্স করা শালিনী ঘোষ এবং শ্রেয়া বসু।
শুধু যে রেকর্ডগুলি ডিজিটাইজ় করা হচ্ছে তাই নয়, এই রেকর্ডগুলি কোন সময়ে, কে গেয়েছিলেন অথবা আবৃত্তি করেছিলেন, সেটাও চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। কী ধরনের যন্ত্রসঙ্গীত ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই মূল্যবান তথ্যও লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এই রেকর্ডগুলি প্রকাশের সময়ে যে ধরনের কভার প্রকাশ করা হয়েছিল, সেগুলির কোম্পানি ধরে ধরে উল্লেখ থাকছে। এর মধ্যে স্বদেশী গানের আলাদা ভাগ রয়েছে। বসন্ত কালের নাটক, পল্লী সংগঠন নাটিকার মতো রেকর্ডও আছে।
এই সংগ্রহশালায় ১৮৩৬ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত সিনেমার প্রায় ৫০০ লবিকার্ড আছে। এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের গোরা উপন্যাস অবলম্বনে যে সিনেমা তৈরি হয়েছিল, সেখানে সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন নজরুল স্বয়ং। সেই তথ্যও রয়েছে। রেকর্ডগুলিকে কেন্দ্র করে যে ১০ বা ২০ পাতার বুলেটিন প্রকাশিত হয়েছিল, তাও সংগ্রহশালায় রয়েছে। তার সংখ্যা ৬০০।
এছাড়াও সঙ্গীত সংক্রান্ত নানা ধরনের পুরোনো পত্রিকাও রয়েছে এখানে। সর্বোপরি সেই সময়ে বিভিন্ন রেকর্ড কোম্পানির কয়েকটি টেস্ট রেকর্ডও রয়েছে, যেগুলি বাজারে আসার আগে টেস্টে বাতিল হয়েছিল। তা–ও রয়েছে সংগ্রহশালায়। ১৯২১ সালে নজরুলের ব্যবহার করা স্ট্যান্ড গ্রামাফোন–সহ, মিকি গ্রামাফোন সংগ্রহশালায় রয়েছে। সেগুলির পূর্ণ সংস্কার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টিতে সহায়তা করছে ব্রিটিশ মিউজ়িয়াম।