এই সময়: সুপ্রিম কোর্টের ‘গুঁতো’য় স্কুলশিক্ষা সচিব ৩ এপ্রিলই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে দ্রুত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)–কে। তার প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে ২৬ হাজার চাকরিহারার জট কাটাতে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা ভরসা রাখছেন রিভিউ পিটিশনের উপরেই। কারণ, সাধারণত এসএসসি–র নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দেড়–দু’বছর লেগে যায়। সেখানে শীর্ষ আদালত আট মাসের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে বলেছে। শুধু ২০১৬–র বিজ্ঞপ্তির হিসেবে এই নিয়োগে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা ধরলে, তা ২২ লাখ। ফলে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া আট মাসের মধ্যে শেষ করা বাস্তবে আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে খোদ শিক্ষা দপ্তরের কর্তারাই।
একদিকে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এক বছর আগের দেওয়া রায়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও শুরু না করায়, ইতিমধ্যে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছে শিক্ষা দপ্তর, স্কুলশিক্ষা কমিশনারেট এবং এসএসসি–র বিরুদ্ধে। কাল, সোমবার সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা আছে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ৩১ মে–র মধ্যে সম্পূর্ণ নির্ঘণ্ট সমেত নতুন নিয়োগ–প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্য, পর্ষদ এবং এসএসসি–কে আদালতের শর্ত, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতেই হবে। এমনকী প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি–সহ রাজ্যকে ৩১ মে–র মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে হলফনামা দিতেই হবে। এই সব শর্ত লঙ্ঘিত হলে চাকরিহারা শিক্ষিক–শিক্ষিকাদের সাময়িক ভাবে স্কুলে ফেরার অনুমতিও বাতিল করা হবে। এমনকী জরিমানাও দিতে হবে রাজ্যকে। এ সব শর্তই স্কুলশিক্ষা দপ্তর, রাজ্য এবং পর্ষদের কাছে প্রধান মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই রাজ্যের আইনজীবীরা রায় পুুনর্বিবেচনার (রিভিউ পিটিশন) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফল পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার পাশাপাশি আদালতের কোপ থেকে বাঁচতে ঢাকঢোল পিটিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রকাশ্যে বেশি আশ্বাস দিচ্ছেন। কলকাতা হাইকোর্টের তুলনায় সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনেক মানবিক এবং তারা বেশি সময়ও দিয়েছে — এমনই মত শিক্ষা প্রশাসকদের। এক কর্তার দাবি, এসএসসি–র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আগেই রিভিউ পিটিশন দায়ের করা হবে। তা না হলে আদালত অবমাননা নিশ্চিত। সেটা এড়ানোর জন্যই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এত তৎপরতা। রাজ্য প্রশাসন, শিক্ষা দপ্তর এবং এসএসসির মধ্যে ঘন ঘন কথাবার্তা চলছে।
বিকাশ ভবনের খবর, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে শিক্ষক নিয়োগের নয়া বিধি কমিশন থেকে বিকাশ ভবন ঘুরে শীর্ষ প্রশাসকদের কাছে বহুদিন আগেই পৌঁছে গিয়েছে। পাশাপাশি শূন্যপদের সঠিক সংখ্যার বিষয়টি এখনও এসএসসি–র অজানা। রাজ্য সরকারের থেকে শূন্যপদের হিসেব পেলেই নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। সেই মতো কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি রিভিউ পিটিশনে ‘যোগ্য’–দের বাঁচাতে সর্বতো ভাবে চেষ্টা করবে রাজ্য এবং এসএসসি। বিকাশ ভবনের আইনি পরামর্শ পেলেই কাল, ২১ এপ্রিলই কমিশন ‘যোগ্য–অযোগ্য’–দের তালিকাও আপলোড করবে। সে জন্য কমিশনের প্রাথমিক সমস্ত কাজকর্ম সারা। কিন্তু এই তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্য প্রশাসনের চূড়ান্ত সম্মতি আসেনি।
এ সব নিয়ে কর্তাদের প্রশ্ন করা হলে একটাই উত্তর আসছে — ‘উফফ। খুব ব্যস্ত। রিভিউ পিটিশনের জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে। অন্য কথা বলার সময় নেই।’