'নিজের ছবি দিন, তবে...', ইউসুফের 'চা খাওয়া' নিয়ে বিতর্কের মাঝে বলল তৃণমূল
হিন্দুস্তান টাইমস | ২০ এপ্রিল ২০২৫
বিগত মাসগুলি বেশ কয়েকটি ইস্যুতেই চাপে পড়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। আরজি কর থেকে চাকরি বাতিল আর সাম্প্রতিকতম মুর্শিদাবাদ হিংসা নিয়ে চাপে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের এই সব কঠিন সময়ে অনেক সাংসদ, বিধায়ককেই দলের হয়ে কোনও কথা বলতে দেখা যায় না। এই নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ রয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দাবি করেছেন যে দলের আইটি সেল মজবুত না। এরই মাঝে আবার ইউসুফ পাঠানের মতো সাংসদ সম্প্রতি ট্রোল হয়েছেন মুর্শিদাবাদ হিংসার আবহে। তাঁর সংসদীয় কেন্দ্রে হিংসা না হলেও সেই একই জেলা জ্বলছিল, আর তখন তিনি শান্তিতে চা খাওয়ার ছবি পোস্ট করেছিলেন ইনস্টাগ্রামে। যা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা উঠেছিল তুঙ্গে। এই সবের মাঝে এবার দলের কর্মীদের জন্যে সোশ্যাল মিডিয়া গাইডলাইন প্রকাশ করল তৃণমূল।
দলের সদস্যদের জন্য শনিবার পাঁচ পয়েন্টের সোশ্যাল মিডিয়া গাইডলাইন জারি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই নিয়ে কুণাল ঘোষ এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে সম্প্রতি লিখেছিলেন, 'এমন কেন হয় যে একজন নেতা হয়ে গেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের হয়ে কেউ আর সুর চড়ান না?' মুর্শিদাবাদের ঘটনার আবহে সম্প্র ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স মিলিয়ে ১০৯৩টি পোস্ট 'ফ্ল্যাগ' করেছিল পুলিশ। সেই সব পোস্ট ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর ছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছিল একটি কোলাজ ছবি নিয়ে। সেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় বাংলায় হিংসা হয় দাবি করে বেশ কিছু সহিংস ঘটনার ছবি দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গ বিজেপি এবং সুকান্ত মজুমদার সেই পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। তবে সেই ছবিতে থাকা সব সহিংসতার দৃশ্যই ভিনরাজ্যের ছিল। পরে বঙ্গ বিজেপি এবং সুকান্ত সেই পোস্ট মুছে দিয়েছিলেন। তবে খুব বেশি জন সাংসদ বিধায়ককে এই সব পোস্টের বিরোধিতা করতে দেখা যায়নি সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এহেন পরিস্থিতিতে দলের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া গাইডলাইন প্রকাশ করে কুণাল ঘোষের বক্তব্য, শুধু নিজের ভালো ভালো ছবি দেওয়া বন্ধ করে বিরোধী দলের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। যে ইস্যু নিয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি আছে, সেখানে দলের অবস্থান স্পষ্ট করুন সঠিক যুক্তি সামনে রেখে। কোনও ইস্যুতে চুপ থাকা চলবে না। শুধু নিজের সুন্দর ছবি দিয়ে কঠিন ইস্যু নিয়ে চুপ থাকলে তা বাজে দেখায়। অনেকেই ঝড়ের সময় নীরব হয়ে যান আবার শান্তি ফইরলে সক্রিয় হন। সবারই নজরে পড়ে এই সব।
এই আবহে কুণাল নিজের পোস্টে লেখে, 'তৃণমূল কংগ্রেসের সহযোদ্ধাদের প্রতি অনুরোধ। ১) সোশ্যাল মিডিয়া আজকের দিনে গুরুত্বপূর্ণ। যথাসম্ভব সক্রিয় থাকুন। ২) নিজের ছবি, কর্মসূচির ছবি, নেতার সঙ্গে ছবি একশোবার পোস্ট করুন। কিন্তু তার সঙ্গে দল বা শীর্ষনেত্রী, নেতার বক্তব্য পোস্টে রাখুন, শেয়ার করুন। ৩) শুধু নিজেদের ভালো ছবি নয়, বিরোধীদের কুৎসার জবাব দিন। প্রতি ইস্যু, প্রতি পয়েন্টে জবাব দিন। যে ইস্যুতে মানুষের কিছু সাময়িক বিভ্রান্তি, সেখানে কড়াভাবে দলের লাইনে যুক্তি দিন। ইস্যুভিত্তিতে নীরব থেকে জল মাপবেন না। নিজেদের ভালো ছবি দেবেন, অথচ অপ্রিয় ইস্যুতে ব্যাট করবেন না, এটা দৃষ্টিকটূ। কিছু ক্ষেত্রে ঝড়ের সময় অনেককে দেখা যায়নি। আবার ঝড় থামতে সক্রিয়। এটা সবাই বোঝে। ৪) দল আছে বলে আমরা যে যার জায়গায়। কোথাও আত্মসমালোচনা থাকতে পারে, তবে তার মধ্যেও আরও অগ্রগতি, মেরামতি। দলের সব ঠিক থাকলে আমি সরব, সব গৌরবের অংশীদার; আর চলার পথে অপ্রিয় ইস্যু এলে আমি নীরব বা বিবেক; এটা হতে পারে না। বিতর্কিত ইস্যুতে মানুষের মাঝে আরও নিবিড় প্রচার আমাদের কর্তব্য। একদল তুমুল গালমন্দ খেয়েও প্রচার করে যাবে, আর কিছু অংশ ইস্যুভিত্তিক জল মাপবে, সব ঠিক হয়ে গেলে আবার পোস্ট হবে, এটা দুর্ভাগ্যের। দলের ভালোর প্রভাবটা নিতে গেলে, অপ্রিয় ইস্যুতেও থাকতে হবে। এটা জীবনের নিয়ম। ৫) মূলত তিনরকম প্রচার জরুরি: ক) মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের কর্মসূচি। খ) বিরোধীদের কুৎসা, অপপ্রচার, চক্রান্ত, বৈষম্যের জবাব। গ) হঠাৎ তৈরি হওয়া ইস্যুগুলিতে লাগাতার বিরোধী অপচেষ্টার পাল্টা তথ্য, যুক্তি, তুলনামূলক ছবি। সর্বশেষ নেতাজি ইন্ডোরের সভাতে যত লোক দেখেছি, যত পোস্ট, যত সেলফি; তার ১০ শতাংশও যদি আরজিকরের সময়ে থাকত, কুৎসাকারীরা অনেক আগে থামতে বাধ্য হত। এই প্রবণতা বারবার চলতে পারে না। সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি, দলীয় পদাধিকারীরাও দয়া করে কার্যকরীভাবে সক্রিয় হোন। যাঁরা সক্রিয়, মজার কথা, তাদের মধ্যে নেতার থেকে কর্মী, সমর্থক বেশি। কেন, নেতা হয়ে গেলে কি সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের হয়ে সওয়াল, তর্ক করতে সম্মানে লাগে? সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা অনেকেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থেকে দলের হয়ে বাংলার স্বার্থে লড়ছেন, তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।'