• ‘পাওয়ার প্ল্যান্ট যেন সত্যি হয়, আর স্বপ্ন দেখতে চাই না’, বলছেন মেদিনীপুরের স্থানীয়রা
    এই সময় | ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, মেদিনীপুর: সামনেই তো ভোট! কত কী যে হবে কে জানে! খানিকটা অভিযোগের সুরই শোনা গেল বিমল চালকের গলায়।

    পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে তাঁর বাড়ি। রাত পোহালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে পাওয়ার প্লান্টের শিলান্যাসে আসছেন। যে স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি নিয়ে কারখানা তৈরি হয়েছে, বিমল তাঁদেরই একজন। বলছেন, ‘স্পেন থেকে তো একবার ঘোষণা হলো, এখানে ইস্পাত কারখানা করবেন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিছু দিনের মধ্যে আবার শুনলাম ওই কারখানা হবে অন্যত্র। এখন আবার শুনছি জিন্দাল গোষ্ঠী পাওয়ার প্লান্ট করবে। হলে ভালো। না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস নেই।’

    দূরের মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর আগমন নিয়ে প্রস্তুতি চলছিল। বিমল বললেন, ‘ইস্পাত প্রকল্পের জন্য সাড়ে চার হাজার একর জমি নিয়েছিল। জমিদাতা প্রায় হাজার জন। ইস্পাতের বদলে জিন্দাল সিমেন্ট কারখানা করেছে। সেখানে ঠিকাদারের অধীনে ৩০০–৪০০ স্থানীয় মানুষ কাজ করছেন। জিন্দাল কোম্পানিতে সরাসরি কাজ করেন মাত্র তিনজন স্থানীয়। এটা ২০২৬–এর ভোটের চমক নাকি জমি ঘিরে রাখার জন্য শিলান্যাস বুঝতে পারছি না।’ জমি দিয়েও স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁদের। তাই, শালবনির মানুষ শিল্পের কথা আর বিশ্বাস করতে পারেন না।

    জিন্দাল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দাল ঘোষণা করেছিলেন, শালবনিতে ১৬ হাজার কোটি টাকায় ৮০০ মেগাওয়াটের দু’টি পাওয়ার প্লান্ট হবে। কর্মসংস্থান হবে পাঁচ হাজার মানুষের। জমিদাতাদের অভিযোগ, ‘২০০৬ থেকে কত ঘোষণাই তো শুনলাম। সেই বাম আমল থেকে শুরু হয়েছে শিলান্যাস শিলান্যাস খেলা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এসেছিলেন। মমতাও আগে এসেছেন। আবার নতুন করে শিলান্যাস। ঘোষণা শুনলেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে মানুষ। আবার সব কেমন ঝিমিয়ে যায়।’

    জমিদাতাদের নিয়ে তৈরি শালবনি জেএসডব্লিউ ল্যান্ড লুজ়ার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক, জমিদাতা পরিষ্কার মাহাতো বলছেন, ‘জমি অধিগ্রহণের আগে ঘোষণা হয়েছিল, এশিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা হবে। বাম আমলে ঢাকঢোল পিটিয়ে শিলান্যাস হলো। কিন্তু ইস্পাত কারখানা হলো না। একটা সিমেন্ট কারখানা চলছে। এই সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয়েছিল, পাশাপাশি তৈরি হবে রং-এর কারখানা। কর্মসংস্থান হবে বহু মানুষের। সেই কারখানাও হয়নি।’

    স্থানীয় যুবক অনুপ সাঁতরার কথায়, ‘সিমেন্ট কারখানায় কিছু মানুষ কাজ পেয়েছেন। অনেকে ব্যবসাও করছেন। আবার শিল্প হলে অনেক মানুষ কাজ পাবেন।’ জমিদাতা আদিত্য মাহাতো বলছেন, ‘বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে ভালো।’ জিন্দাল গোষ্ঠীর পক্ষে দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় শনিবার বলেন, ‘একটি পাওয়ার প্লান্ট রূপায়িত করতে প্রায় তিন বছর সময় লাগবে। প্রকল্প চালু হলে আগে এলাকার শিক্ষিত তরুণ–তরুণীরা চাকরি পাবেন।’

  • Link to this news (এই সময়)