এই সময়, হরিপাল: বাইরের চেহারা দেখে নিরীহ ও গোবেচারা লোক বলে মনে হতে পারে। যদিও হরিপালের ব্যবসায়ী শুকুর আলির অপহরণ কাণ্ডের পিছনে অন্যতম মাস্টার মাইন্ড ছিল আইনল হক। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিল ছেলে ইনজামুল। বাবা–ছেলের যুগলবন্দিতেই গোটা অপারেশনটা চালানো হয়েছিল বলে মনে করছে পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, পাণ্ডুয়ায় বসে হরিপাল বন্দিপুরের চিত্রশালির ব্যবসায়ী শুকুরকে অপহরণ করে ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের ব্লু–প্রিন্ট তৈরি করে আইনল। আগাম পরিচয়ের সুবাদে আইনল এবং ইনজামুল আগে থেকেই জানত, রোজ দুপুরে শুকুর তাঁর ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যায়।
গরমের সময় দুপুরে রাস্তাঘাট সুনসান থাকে। সেই কারণেই এই সময়টাকে বেছে নেয় তারা। অপারেশন শুরু করার আগে পরিকল্পনা মাফিক তারা একটি চারচাকা গাড়ি ভাড়া করে। বুধবার দুপুরে সেই গাড়িতে করে শুকুরকে অপহরণ করে পাণ্ডুয়ার একটি বাড়িতে নিয়ে এসে আটকে রাখে তারা। সেখানে আইনলের হাত–মুখ বেঁধে মারধর করা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টায় শুকুরের স্ত্রী আস্মাউল হুসনা হরিপাল থানায় তাঁর স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন চিহ্নিত করে পাণ্ডুয়ার জয়ের বাজার থেকে পুলিশ ৫ জন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সূত্রের খবর, অপহরণ কাণ্ডের মূল পান্ডা আইনল আলুর ব্যবসা করে। তার বিরুদ্ধে আলুর বস্তা চুরি–সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তার ছেলে ইনজামুল ভিন রাজ্যে সোনার অলঙ্কার তৈরির কারখানায় কাজ করে। অপহৃত শুকুর নিজেকে আলুর ব্যবসায়ী বলে দাবি করে। জেরার সময় ধৃতরা দাবি করে, ব্যবসায়িক শত্রুতার কারণেই শুকুরকে তারা অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছিল।
কিন্তু তারপরে শুকুরের পরিবার হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে যাওয়ায় পুলিশের সন্দেহ হয়। তদন্তকারী এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, শুকুর এক সময় ভিন রাজ্যে অলঙ্কার শিল্পের কর্মী ছিল। ইনজামুলও একই কাজের সঙ্গে যুক্ত। সেই সুবাদে সম্ভবত সোনা কেনাবেচা অথবা সোনা পাচারের মতো কোনও বেআইনি কারবারে তারা যুক্ত ছিল। বখরার ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদের জেরেই শুকুরকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। আক্রোশ থেকেই তাঁর হাত–পা বেঁধে মারধরও করা হয়। পুলিশের বক্তব্য, আলুর ব্যবসা নিয়ে কোনও ঝামেলা হলে সেটা অন্যান্য আলু ব্যবসায়ীদের কানে যেত। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। হুগলি গ্রামীণ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘অপহরণের পিছনে আসল রহস্য কী, সেটা জানতেই ধৃতদের টানা জেরা করা হচ্ছে। খুব শিগগির আসল সত্যটা জানা যাবে।’