পোড়া বাড়ি। আগুনে খাক হয়ে গিয়েছে সব কিছু। ভাঙাচোরা গেরস্থালী। উঠোনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে বাসন, বইখাতা, ব্যাঙ্কের পাসবুক পর্যন্ত। সামনে শূন্য দৃষ্টিতে বসে রয়েছেন বৃদ্ধা। সব হারিয়েছেন তাঁরা, সব!
শুক্র-শনিতে মালদা-মুর্শিদাবাদ ঘুরে এমন খণ্ডচিত্রই দেখেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরা। তারপর রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রোহতকার বললেন, ‘পরিস্থিতি খুব খারাপ। যা দেখলাম ভুলব না।’
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদ। ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো থেকে শুরু করে খুন, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, উত্তেজনা ছিল চরমে। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই আশ্রয় নেন পাশের জেলা মালদায়। কেউ কেউ আবার পালিয়ে যান ঝাড়খণ্ডের পাঁকুড়ে।
হিংসা বিধ্বস্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মালদা ও মুর্শিদাবাদ ঘুরে দেখেন জাতীয় মহিলা কমিশনের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তাঁদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন ক্ষতিগ্রস্তরা। কমিশনের চেয়ারপার্সন তখনই বলেছিলেন, ‘দিল্লি ফিরে সব রিপোর্ট দেব’।
এ দিন নিউ টাউনের একটি পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজয়া বলেন, ‘খুব খারাপ অবস্থা। এই সাম্প্রদায়িক ঘটনার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে মহিলা ও বাচ্চাদের উপরে। ৪ দিন আগে যে মা হয়েছে, তাঁকেও প্রাণ হাতে করে পালাতে হয়েছে।’
কয়েক শো ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। মহিলাদের শারীরিক পরিস্থিতির উপর এর প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। এমনটাই বলছেন বিজয়া। তাঁর কথায়, ‘ওঁরা বারবার বলছেন, আমরা কী করেছি? আমাদের সঙ্গে কেন এমন করল? আমরা তো এই গ্রামেরই লোক।’ ক্ষতিগ্রস্তদের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিজয়া।
এই পরিস্থিতে সরকারকে তার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, ‘যে ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা ঠিক করা এখন সরকারের দায়িত্ব। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি। এঁরা আমাদের নিজেদের লোক।’ পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশনের কাছেও একই আর্জি জানান তিনি।
বিজয়া বলেন, ‘বিএসএফ ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ওঁরা তাই এলাকায় স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যসচিব, ডিজি-র রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।’
শনিবারই মুর্শিদাবাদের ঘটনার জন্য বিজেপি আরএসএসের দিকে আঙুল তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে বিজয়া বলছেন, ‘আমি এমন কিছু দেখিনি। একটাই কথা বলব, এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করবেন না। সরকার এখনও পর্যন্ত কী ব্যাবস্থা নিল, ওঁদের থাকার ব্যবস্থা কেন করা হল না সেই দিকে নজর দেওয়া উচিত।’