• ‘সকলে মিলে আমাদের বিভ্রান্ত করছে’, ফুঁসছেন চাকরিহারা বিপ্লব
    এই সময় | ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান। দাদা তখন ষষ্ঠ শ্রেণি। চাষের কাজ করে মা তাঁকে আর দাদাকে বড় করেন। পড়াশোনা করে চাকরির পরীক্ষা, তা থেকে ২০১৮ সালে স্কুলে যোগদান মেদিনীপুরের বেলদা থানার মানিকড়া গ্রামের বিপ্লব মাইতির। ২০১৮ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা সংলগ্ন ফ্রেজারগঞ্জের একটি স্কুলে যোগদান করেন বিপ্লব। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিউচুয়াল ট্রান্সফার নিয়ে মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের তোড়রা জুনিয়র হাইস্কুলে চলে আসেন। সেই থেকে এখানেই। সেই চাকরি এখন প্রশ্নের মুখে। সুপ্রিম কোর্ট ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে বটে। তবে এরই মধ্যে পরীক্ষায় বসে নিজেকে প্রমাণও করতে হবে বিপ্লবদের মতো আরও বহু স্যর-দিদিমণিকে। তাঁদের কেউ ৫ বছর, কেউ বা ৮ বছর শিক্ষকতা করে ফেলেছেন।

    ২০১৬ সালে এসএসসি পাশ করে ভূগোলের (নবম-দশম শ্রেণি) শিক্ষক হিসাবে স্কুলে যোগ দেন বিপ্লব মাইতি। বাবা তপন মাইতি মারা যাওয়ার পর দুই ছেলে দুর্লভ ও বিপ্লবকে খুব কষ্ট করে বড় করেছেন মা গীতা মাইতি। জমিজমা চাষ করে দুই ছেলেকে বড় করেছেন গীতা। সেই বিপ্লব স্কুলে চাকরি পাওয়ার পরই ঠিক করেছিলেন মায়ের জন্য একটা পাকাবাড়ি তৈরি করবেন। সে কাজে হাতও লাগান। তবে ৩ এপ্রিল যা হল, তা তাঁর কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই।

    বিপ্লবের চাকরি হারানোর খবরে দুঃখ পেয়েছেন তোড়রা জুনিয়র হাইস্কুলের টিচার ইনচার্জ বিশ্বনাথ জানা। তিনি জানান, বিপ্লব যোগ্য। তার পরও এ ভাবে চাকরি চলে যাওয়া, মেনে নেওয়া কষ্টকর। বিশ্বনাথ জানা জানান, কোভিডের প্রথম পর্বের পর এ স্কুলে যোগ দেন বিপ্লব। সে সময় এলাকায় খাবার, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার বিলি করেছিলেন তাঁরা। সেখানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন বিপ্লব মাইতিও। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলো সবদিকেই ঝোঁক তাঁর। এমন শিক্ষক চলে যাবেন ভেবে মন ভার সহশিক্ষকদের।

    তোড়রা জুনিয়র হাইস্কুলে ৪ জন শিক্ষক। কোনও শিক্ষাকর্মীও নেই। বিপ্লব চলে গেলে ৩ জন থাকবেন। বিশ্বনাথ জানা বলেন, ‘আশেপাশে ৩-৪টি হাইস্কুল থাকায় আমাদের এই জুনিয়র হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। তার উপর বিপ্লবের মতো একজন শিক্ষক চলে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হয়তো আরও কমবে। আমরাও সব সময়ই ওর অভাব অনুভব করব।’ এই সময় অনলাইনকে বিপ্লব বলেন, ‘যোগ্য শিক্ষকদের সুবিচার হলো না। সকলে মিলে আমাদের বিভ্রান্ত করছে। আমাদের সঙ্গে যে অন্যায় হলো, সকল স্তরের মানুষের তার প্রতিবাদ করা উচিত।’

  • Link to this news (এই সময়)