সংবাদদাতা, কাঁথি: আর ন’ দিন। তারপরই দীঘায় জগন্নাথধামের মেগা উদ্বোধন। এক বিরল মুহূর্তের সাক্ষী হতে চলেছে সৈকত শহর। বিপুল কর্মযজ্ঞ চলছে সেখানে। চলছে চূড়ান্ত প্রস্তুতি। সর্বত্রই সাজ সাজ রব। ২৯ এপ্রিল হোম-যজ্ঞ হবে। ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ায় প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে জগন্নাথদেবের। ওইদিনই মন্দিরের উদ্বোধন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত থাকবেন একাধিক মন্ত্রী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পপতি, তারকা। বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখার জন্য ১২ হাজারের দর্শকাসন তৈরি হচ্ছে। জেলার প্রতিটি ব্লক থেকে মানুষ আসবে। রবিবার থেকে ইসকনের প্রতিনিধিরা আসতে শুরু করেছেন। ২২ এপ্রিল পুরীর দয়িতাপতি ও তাঁর সঙ্গীরা পৌঁছবেন। অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে করতে প্রতিদিনই প্রশাসনিক বৈঠক চলছে।
রবিবার দীঘায় গিয়ে দেখা গেল, মূল মন্দির সহ অন্যান্য মন্দির, অফিসঘর, সর্বত্রই ‘ফিনিশিং টাচ’ দেওয়া চলছে। নজরদারির জন্য মন্দিরের পাশে এবং বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার বসছে। মন্দির চত্বর সহ দীঘাজুড়ে স্থায়ী সিসি ক্যামেরা বসানো চলছে। হোম-যজ্ঞানুষ্ঠানের খড়ের চালাঘর তৈরি হচ্ছে। জগন্নাথধামের সামনে চৈতন্যদ্বার তৈরির কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। চৈতন্যদ্বার তৈরির জন্য মূল রাস্তা বন্ধ থাকায় দীঘাগামী বাস ও বড় গাড়িগুলি বাইপাস হয়ে নিউ দীঘা পর্যন্ত যাতায়াত করছে। ছোট গাড়িগুলি মন্দিরের পিছন দিক দিয়ে ওল্ড দীঘা থেকে নিউ দীঘা কিংবা নিউ দীঘা থেকে ওল্ড দীঘায় আসা-যাওয়া করছে। বাইপাসে যানবাহনের ভিড় বাড়ায় প্রতিদিনই যানজট হচ্ছে। শীঘ্রই চৈতন্যদ্বার তৈরির কাজ শেষ হবে এবং মূল রাস্তা খুলে দেওয়া হবে। উদ্বোধনের সময় যেহেতু প্রচুর গাড়ি আসবে, তারজন্য জগন্নাথধামের পার্শ্ববর্তী সরকারি জায়গা সহ আরও কয়েকটি জায়গায় পার্কিং প্লেস তৈরি চলছে। জগন্নাথধামের সামনে নেচার পার্ক তৈরির কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। দীঘা মোহনা থেকে উদয়পুর পর্যন্ত সমুদ্রসৈকত সাফসুতরো করা হচ্ছে। রাস্তার দু’দিকে নীল-সাদা রং করা হচ্ছে। দীঘার রাস্তা ধুলো ওড়ে। ধুলোর দাপট কমাতে ১৫টি ইঞ্জিন আনছে দমকল বিভাগ। ওই ইঞ্জিন থেকে রাস্তায় জল ঢালা হবে। এদিকে দীঘায় স্থায়ী হেলিপ্যাড সেজে উঠছে। ভিআইপিদের সংখ্যা বাড়তে পারে ধরে নিয়ে পাশেই অতিরিক্ত দু’টি অস্থায়ী হেলিপ্যাড তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি ব্লক থেকে মানুষকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিডিওদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্লকগুলিতে পর্যাপ্ত বাস রাখা হচ্ছে। মূল হ্যাঙারে পোডিয়াম সহ ছ’ হাজার, দ্বিতীয় হ্যাঙারে চার হাজার এবং তৃতীয় হ্যাঙারে দু’হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমন্ত্রিত ভিআইপিদের হোটেল থেকে মন্দির এবং উদ্বোধনের মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৫টি ভলভো বাস থাকবে। জগন্নাথধামের পাশে জেলা পরিষদের গেস্ট হাউসে হেলথ ক্যাম্প, অ্যাম্বুল্যান্স, দমকলের ব্যবস্থা থাকবে। গত শুক্রবার জগন্নাথধাম উদ্বোধনকে সামনে রেখে বিডিও এবং বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে দীঘায় বড়সড় বৈঠক করেন জেলাশাসক। মন্দিরের ভিতরের পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) নেহা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বাইরে আমন্ত্রিত ভিআইপিদের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) বৈভব চৌধুরী। গোটা বিষয়টি তদারকি করবেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী। বিডিওদের বিভিন্ন দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাকে নানা বিষয় পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, রাজ্য সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী জগন্নাথধাম উদ্বোধনের সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এসপি সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সমস্ত পুলিসি ব্যবস্থাপনা নেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুতি চলছে। শীঘ্রই দীঘায় প্রয়োজনীয় পুলিস মোতায়েন করা হবে। সেজে উঠছে মন্দির ।-ফাইল চিত্র