• জেলা সভাপতি পদে মহিলা নেত্রী পড়ল অশ্লীল পোস্টার
    বর্তমান | ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ফের বেআব্রু বিজেপির অন্দরমহল। দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ল জেলা বিজেপির কার্যালয়েই! সভাপতি পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন ওই মহিলা। রবিবার রাতেই জেলা সভাপতি হিসেবে তাঁর নামে সিলমোহর পড়ে। সেই অপর্ণা নন্দীর বিরুদ্ধে পোস্টারে সরাসরি কুরুচিকর অভিযোগ আনার পাশাপাশি ‘মানব না’ বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই কাণ্ড বিজেপির অন্তরকলহকে এক্কেবারে খোলা বাজারে এনে দাঁড় করাল। যদিও দলের অন্দরে কোন্দল নয়, তৃণমূলকে দুষেই রাজনীতির ময়দানে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে গেরুয়া শিবির। রাজ্যজুড়ে বিজেপির ৪৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৩টি জেলাতেই সভাপতির নাম ঘোষিত হয়ে গিয়েছে। সভাপতির নাম ঘোষণা না হওয়ার তালিকায় ছিল নদীয়া দক্ষিণ। অথচ লোকসভা অথবা বিধানসভা আসনের নিরিখে রাজ্যের মধ্যে নদীয়া দক্ষিণ বিজেপির অন্যতম শক্ত জমি। যদিও রবিবার রাতেই চূড়ান্ত হয় সভাপতির নাম। ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নিয়মের ভিত্তিতে স্বাভাবিকভাবেই সরে যেতে হয়েছে বর্তমান জেলা সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়কে। কারণ বর্তমানে তিনি রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক। তবে রবিবার বিকেল পর্যন্ত জেলা সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে টানাপোড়েন চলেছে। একাধিক শিবিরের মধ্যে রীতিমতো ঠান্ডা লড়াই চলেছে। প্রাথমিক স্তরে জেলা সভাপতির একটি লিস্ট রাজ্যে পৌঁছলেও রবিবার সন্ধে পর্যন্ত নাম ঘোষণা করতে পারেনি নেতৃত্ব। অপর্ণা নন্দীর নাম গোড়া থেকেই ছিল সম্ভাব্যদের তালিকায়। আর এই জল্পনাই বেআব্রু করে দেয় বিজেপির অন্দরের কোন্দল। কারণ শনিবার রাতে কে বা কারা রানাঘাটে নদীয়া দক্ষিণ জেলা বিজেপির কার্যালয়েই ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটিয়ে গিয়েছেন। তাতে ওই মহিলা নেত্রীর নাম করে লেখা হয়েছে ‘মানব না’। এমনকী কোনও মহিলা সভাপতির পরিবর্তে যুবকদের মধ্যে থেকেই কাউকে গুরুদায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে পোস্টারগুলিতে। শুধু তাই নয়, পোস্টারে নাম থাকা মহিলা নেত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক কুরুচিকর অভিযোগও তুলে ধরা হয়েছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিজেপির দাবি, দলীয় কোন্দল নয়। এই কাজ নাকি করেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বর্তমান জেলা সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, এটা বিজেপির সংস্কৃতি নয়। দলীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয় আমাদের দলে। পোস্টার লাগিয়ে বিজেপিকে কালিমালিপ্ত করার কাজটি তৃণমূল করেছে। তবে তাদের তো দলের মধ্যে অনেক ভাগ। তাই কোন পক্ষ করেছে, তা আমরা বলতে পারব না। একই সুরে নদীয়া দক্ষিণ সংগঠনিক জেলা বিজেপির মুখপাত্র সোমনাথ কর বলেন, রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ ধরতে তৃণমূল এইসব কাজ করাচ্ছে। বিজেপির সংস্কৃতি নয় এগুলো। পাল্টা তৃণমূলের তরফে রানাঘাট পুর চেয়ারম্যান তথা শাসক শিবিরের নেতা কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপির কে সভাপতি হবে, না হবে, তা নিয়ে আমরা মাথাব্যথা করব কেন? এ নিয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতে পারছে না বিজেপি। তাই এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগাচ্ছে। 

    প্রসঙ্গত, বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এইভাবে খোলা বাজারে চলে আসা প্রথম নয়। এর আগেও মণ্ডল সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছিল জেলা পার্টি অফিস। সেখানে রীতিমতো চেয়ার-টেবিল ছোড়াছুড়ি, ভাঙচুর বিক্ষোভের মতো ঘটনাও ঘটেছিল। ফলে আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে নদীয়া দক্ষিণে শক্ত জমিতেও বিজেপির ভিত যে নড়বড় করছে তা একেবারে স্পষ্ট।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)