• সরকারি প্রকল্পের অর্থে ভাগ বসাচ্ছে দালালরা
    বর্তমান | ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: মুখ্যমন্ত্রীর জনমুখী কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নজর পড়েছে অসাধু ব্যক্তিদের। উপভোক্তাকে সরকারি টাকা পাইয়ে দেওয়ার নামে ‘তোলা’ আদায় করা হচ্ছে। চাষিকে দেওয়া কৃষকবন্ধুর আর্থিক সহায়তা এবং চাষির পরিবারকে দেওয়া কৃষকবন্ধুর মৃত্যুকালীন সহায়তা এই দুই ক্ষেত্রকেই টার্গেট করা হচ্ছে। সেইমতো সরকারি টাকায় থাবা বসাচ্ছে একদল দালাল। যাদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। প্রান্তিক এলাকায় কার্যত ‘চক্র’ বানিয়ে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন কৃষ্ণনগর লোকসভার তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। শনিবার রাতে সেই পোস্ট করে সাধারণ মানুষকে এনিয়ে সতর্কবার্তা দেন। 

    তিনি বলেন, এটা আমার নজরে এসেছে। বেশিকিছু জায়গা থেকে অভিযোগও আসছে। খতিয়ে দেখা হলে জানা যায় অভিযোগগুলি সত্যি। কেউ মারা গেলে, তাঁর বাড়িতে দালাল পৌঁছে যাচ্ছে। পঞ্চায়েতের সঙ্গে জড়িত এমন লোকজনও রয়েছে। যারা সরকারি টাকা পাইয়ে দেওয়ার নামে উপভোক্তার থেকে টাকা আদায় করছে। এটাকে একেবারে বন্ধ করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই প্রকল্পের টাকা এডিএ অফিসের ট্রেজারি থেকে সরাসরি উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে আসবে।‌ তার জন্য কাউকে এক টাকাও দেবেন না।‌ 

    প্রসঙ্গত, চাষিদের জন্য রাজ্য সরকার অন্যতম প্রকল্প হল এই কৃষকবন্ধু। এই প্রকল্পে চাষিদের সুবিধার্থে রাজ্য সরকারের তরফে বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কৃষকবন্ধুর আর্থিক সহায়তা প্রকল্পের আওতায় চাষিদের নিজস্ব এক একর বা তার অধিক চাষযোগ্য জমি থাকলে বার্ষিক ভাতা হিসেবে বছরে দু’দফায় ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আর এক একরের কম চাষযোগ্য জমি থাকলে বার্ষিক ৫ হাজার টাকা ভাতা হিসেবে দু’দফায় দেওয়া হয় চাষিদের। সেই টাকা সরাসরি চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকে। সেই টাকা দালাল চক্র, ফুসলিয়ে চাষিদের থেকে আদায় করে নিচ্ছে। 

    আবার কৃষকবন্ধু প্রকল্পের আওতায় চাষিদের মৃত্যুকালীন সহায়তাও দেয় রাজ্য সরকার। কোনও চাষি মারা গেলে তাঁর পরিবারকে এককালীন দু’লক্ষ টাকা দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের তরফে। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি মৃত চাষির পরিবারকেই এই সহায়তা দেওয়া হয়। ২০২৪-’২৫ অর্থ বর্ষে নদীয়া জেলায় ১ হাজার ১৯৩ জন চাষি পরিবারকে ২৩ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।‌ 

    অভিযোগ, অসাধু চক্র উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার পর তাঁদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করে নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট দালাল এলাকারই পঞ্চায়েত সদস্য কিংবা জনপ্রতিনিধি। নদীয়া জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সিরাজ শেখ বলেন, উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে কৃষকবন্ধুর টাকা সরাসরি ঢোকে। কেউ যদি চাষিদের অধিকারে ভাগ বসাতে চায়, আমরা ব্যবস্থা নেব। অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)