• স্ত্রীর প্রেমিক ইয়াসিনকে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে খুন করে স্বামী গিয়াসউদ্দিন
    বর্তমান | ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ঘাটাল: বুধবার রাতে খুন হয়েছিলেন চন্দ্রকোণা থানার চাতলাবাঁধির ইয়াসিন গায়েন (২২)। ঘটনার দু’ দিন পরে জানা গেল  পরকীয়া সম্পর্কের জেরেই তিনি খুন হয়েছিলেন। প্রেমিকা ও তার স্বামী মিলেই বুধবার রাতে ইয়াসিনকে খুন করেছিল বলে পুলিস প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে রোমহর্ষক তথ্যও। ঘাটাল মহকুমা পুলিস আধিকারিক অনিমেষ সিংহরায় জানান, চন্দ্রকোণার চালতাবাঁধি গ্রামের ঘটনায় ওই গ্রামেরই  গিয়াসউদ্দিন মল্লিক ওরফে বাপন ও তার স্ত্রী আসনা বিবিকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে  দু’ দিনের মধ্যেই খুনের কিনারা হওয়ায় খুশি মহকুমার বাসিন্দারা।

    বৃহস্পতিবার সকালে ওই যুবকের রহস্যমৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। ওই দিন সকালেই গ্রামের একটি কৃষিজমির পাশের নালায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার হয় যুবকের দেহ। দেহে একাধিক ক্ষতচিহ্ন ও গলায় দড়ির দাগ দেখে প্রথম থেকেই পরিবারের অভিযোগ ছিল, ইয়াসিনকে খুন করা হয়েছে। চন্দ্রকোণা থানার ওসি শুভঙ্কর রায় এবং রামজীবনপুর ফাঁড়ির আইসি সৌমিতেন্দু বেরা তদন্তে নেমে ইয়াসিনের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তদন্ত এগতে থাকেন। দু’দিনের মধ্যেই তাঁরা রহস্যভেদে সক্ষম হন।

    মৃত ইয়াসিন গ্রামেরই এক বিবাহিত মহিলা আসনা বিবির সঙ্গে  শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আসনার স্বামী গিয়াসউদ্দিন। জেরার মুখে গিয়াসউদ্দিন পুলিসকে জানায়, অনেক দিন থেকেই ইয়াসিনকে ধরার জন্য সে চেষ্টা করছিল। বুধবার রাতে পাশের গ্রামে ইসলামি জলসা ছিল। সেখানে যাওয়ার নাম করে গিয়াসউদ্দিন নিজেদের বাড়ির ছাদে লুকিয়ে ছিল। কারণ সে নিশ্চিত ছিল ওই খবর তার স্ত্রীর মাধ্যেমে ইয়াসিনের কাছে পৌঁছলে রাতে ইয়াসিন স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসবে। রাত ১০টা নাগাদ ইয়াসিন তাদের বাড়িতে আসে। তখনই হাতেনাতে তাঁকে ধরে মারধর শুরু করে গিয়াসউদ্দিন। প্রথমে ইয়াসিনকে ধরে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আসনাও তার স্বামীকে সাহায্য করতে শুরু করে। আসনা ও ইয়াসিন কোথায় নির্জনে শারীরিক সম্পর্ক করত সেটা জানতে চায় গিয়াসউদ্দিন। ইয়াসিন তা দেখাতে রাজি হলে তার হাতে দড়ি বেঁধে বাড়ির বাইরে বের করা হয়। রাতেই মাঠের মাঝে বিভিন্ন জায়গা দেখিয়ে দেয় ইসায়িন। গিয়াসউদ্দিন জানায়, ওই সময়ই ইয়াসিনের গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে  গাছে পেঁচিয়ে দেয়। গিয়াসউদ্দিন বলে, মাঠে নিয়ে যাওয়ার সময় আসনা সঙ্গে ছিল না। সে একাই সব কাজ করেছে।

    ওই ঘটনা ঠিক বিশ্বাস করতে রাজি হয়নি পুলিস। আসনার নগ্ন কিছু ভিডিও ইয়াসিনের কাছে ছিল। সেটা দিয়েই ইয়াসিন বার বার ব্ল্যাকমেল করত গৃহবধূকে। তাই পুলিসের অনুমান, গৃহবধূ অতিষ্ঠ হয়ে এবং ভয় পেয়েই বিষয়টি স্বামীকে জানায়। দুজনে যুক্তি করে বাড়িতে ইয়াসিনকে ডেকে পাঠিয়ে পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে। তারপরই বাড়ি থেকে ৩০০ মিটার দূরে মৃতদেহ ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। তবে আসনা পুলিসের কাছে স্বীকার করেছে, ইয়াসিনের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের শারীরিক সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি ইয়াসিন কিছু ভিডিও দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)