• নির্বিচারে গাছ কাটায় গ্রামের মূল রাস্তাটি ধসে পড়ার অপেক্ষা, বাসিন্দারা আতঙ্কিত
    বর্তমান | ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনে উন্নয়ন পরিকাঠামোও গভীর সঙ্কটে। গ্রামের মূল রাস্তাটি ধসে পড়ার অপেক্ষায়। রাস্তার ধার থেকে গাছ কেটে নেওয়ার ফলে মাটি আলগা হয়ে গিয়েছে। বিপজ্জনক অবস্থায় ঝুলছে নবদ্বীপের ফরেস্টডাঙা গ্রামে যাওয়ার মূল রাস্তাটি। যেকোন মুহূর্তে ধস নেমে রাস্তাটির অধিকাংশ জায়গা ভেঙে পড়তে পারে। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি সারানো না হলে কোনও বড়সড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। হতে পারে প্রাণহানি। এমনটাই আশঙ্কা করছেন নবদ্বীপের মাজদিয়া-পানশিলা পঞ্চায়েতের ফরেস্টডাঙা গ্রামের বাসিন্দারা। এবিষয়ে দু’বছর আগে থেকে রাস্তাটি মেরামতির জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন গ্রামবাসীরা। এমনকী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে দু’টি স্মারকলিপি পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং নবদ্বীপ ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে জমা দিয়েছিলেন। ব্লক প্রশাসন থেকে রাস্তাটি মেরামতির আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। 

    গোটা বিষয়টি জানতে পেরে কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা শাসক শারদ্বতী চৌধুরী জানিয়েছেন,  বিডিওকে নতুন করে প্রস্তাব পাঠাতে বলব, জেলা পরিষদ যাতে এই রাস্তার জন্য অর্থ বরাদ্দ করে। ভাগীরথী তীরবর্তী নবদ্বীপের গৌরাঙ্গ সেতু সংলগ্ন গ্রাম ফরেস্টডাঙা। এই গ্রামে প্রায় এক হাজার পরিবারের বসবাস। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই জনমজুর। ভোর হতে না হতেই এই রাস্তা ধরে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। 

    নবদ্বীপ গৌরাঙ্গ সেতুর সঙ্গে সংযোগকারী মূল রাস্তা ফরেস্টডাঙা গ্রাম। নবদ্বীপ যাতায়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ। সাত বছর আগে নবদ্বীপ গৌরাঙ্গ সেতুর পূর্বপাড় থেকে দক্ষিণ দিকে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পিডব্লুডি এই রাস্তাটি তৈরি করেছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে অতিবৃষ্টির কারণে রাস্তাটির অধিকাংশ জায়গার নীচের মাটি ধস নেমে গর্ত হয়ে গিয়েছে। তার উপর রাস্তার দু’পাশ থেকে প্রচুর গাছ কেটে নেওয়া হয়। ফলে রাস্তাটি ধরে রাখার কোনও মাটি নেই নীচের অংশে। কোথাও কোথাও এপার ওপার দেখাও যাচ্ছে। কংক্রিট ঢালাই করা রাস্তাটির কিছু কিছু জায়গা এখন ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। এই রাস্তাটি ভেঙে গেলে গ্রামবাসীদের প্রায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার ঘুরপথে গৌরনগর হয়ে নবদ্বীপ যাতায়াত করতে হবে। 

    জানা গিয়েছে,শুধু ফরেস্টডাঙার বাসিন্দারাই নন, পার্শ্ববর্তী আনন্দবাস, ঘোলাপাড়া, জঙ্গলবাস সহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারাও এই রাস্তাটি দিয়ে যাতায়াত করেন। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী তানিয়া খাতুন জানায়, এই গ্রাম থেকে নবদ্বীপ যাওয়ার এই একটি মাত্র ঢালাই রাস্তা। রাস্তাটি ভেঙে গেলে আমাদের খুবই সমস্যায় পড়তে হবে। অপর বাসিন্দা পরান মালিতা বলেন, রাস্তাটির বিষয়ে কোন সতর্কীকরণ বোর্ড এখনও লাগানো হয়নি। যদি ভুলবশত কোনও ভারী গাড়ি ঢুকে পড়ে, তাহলে রাস্তাটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে। মাজদিয়া পানশিলা পঞ্চায়েতের শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যের সঞ্চালক সুরজ চৌধুরী বলেন,  বিডিও রাস্তা সারানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু সমাধান হয়নি। এখন এই রাস্তার দু’দিকে সুড়ঙ্গ হয়ে গিয়েছে। কেননা এই রাস্তার দু’ধারে যে গাছগুলো ছিল, সেগুলো কাটা হয়েছে। যারা কেটে নিয়ে গিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পঞ্চায়েতের শিল্প পরিকাঠামো সঞ্চালক মিঠুন ঘোষ বলেন, এই রাস্তা সরানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা পঞ্চায়েতের নেই। তবে এবিষয়ে জেলা পরিষদকে ২০২৩ সাল থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। বর্তমানে ভাগীরথী তীরবর্তী এই রাস্তাটি নদীবাঁধের কাজ করে। যদি রাস্তাটি ভেঙে যায় তবে ভাগীরথীর জল বাড়লে বিস্তীর্ণ এলাকায় কয়েকশো বিঘা জমি প্লাবিত হয়ে চাষের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)