নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রামের মালাবতী জঙ্গলের ভিতর আছে নীল জলের হ্রদ। রয়েছে মাটি ভেদ করে উঠে আসা জলের প্রস্রবণ। জঙ্গল লাগোয়া গ্ৰামের বাসিন্দারা বলেন ‘বনচিড়িয়ার ঝরন’। দলমা পাহাড়ের হাতির পাল চুপিসারে ঝর্ণার জল খেতে আসে।
বিনপুর-২ ব্লকের কাকো গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকার দহিজুরি-বিনপুর-শিলদা রাস্তার পাশে আছে বিস্তীর্ণ মালাবতী জঙ্গল। স্থানীয় মানুষের কাছে রাস্তার নাম ‘হাতিয়ারী সড়ক’। দলমা পাহাড়ের হাতির পাল রাস্তা পেরিয়ে জঙ্গলে ঢোকে। রাস্তা সংলগ্ন মালাবতী গ্ৰাম। সেখানে আহির ও শবর সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। গ্ৰামের ডান দিকের রাস্তা ধরে এগলেই জঙ্গলের ভিতর রয়েছে চিয়ানবেরা গ্ৰাম। ঘন শাল, পিয়াল, কেঁদো, খেজুর ও আকন্দ গাছের জঙ্গলের ভিতর রয়েছে বনচিড়িয়ার ঝর্ণা। প্রকৃতির আশ্চর্য খেয়ালে এই প্রস্রবণটি তৈরি হয়েছে। স্বচ্ছ জলাশয়ে ছোট মাছ খেলা করে। চারপাশে বন্য জন্তুদের পায়ের ছাপও দেখা যায়। গভীর রাতে দলমা পাহাড়ের হাতির পাল ঝর্ণায় জল খেতে আসে। ঝর্ণার শীর্ণ জলধারা জঙ্গলের ভিতর আঁকাবাকা পথ দিয়ে পার্শ্ববর্তী নীল হ্রদে গিয়ে পড়েছে। হ্রদটি রয়েছে কলিয়াম এলাকায়। আগে হ্রদটি পাথর খাদান ছিল। পরবর্তীতে বৃষ্টি ও ঝর্ণার জলে হ্রদটি তৈরি হয়েছে। ঝর্ণার জল এসে পড়ায় হ্রদে সারা বছর জল থাকে। জলের রং নীল দেখায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা হ্রদটিকে ‘নীল হ্রদ’ বলেন। ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকার জঙ্গলের মাটি শুষ্ক ও পাথুরে। তবে, ঝর্ণা সংলগ্ন মায়াবতী জঙ্গলের মাটি নরম। জঙ্গলের রাস্তায় হেঁটে গেলে পা নরম মাটিতে বসে যায়। গ্ৰামের মানুষ হ্রদের জলে চাষবাস করে।
চিয়ানবেরা গ্ৰামের বাসিন্দা তারাপদ আহির বলেন, বনচিড়িয়ার ঝরনের কথা স্থানীয় গ্ৰামবাসীরাই জানে। ঝর্ণার ছোট জলাশয়ের কাছে সবসময় পাখিদের দেখা যায়। গ্ৰামের মানুষ একে ‘বনচিড়িয়ার ঝরন’ বলে। দলমা পাহাড় থেকে হাতির পাল এখানে জল খেতে আসে। বন্য জন্তুরা ওই এলাকায় ঘুরে বেড়ায় বলে স্থানীয় মানুষ ঝরণের চারপাশ এড়িয়ে চলে। অপর বাসিন্দা ধীরেন শবর বলেন, হ্রদের কাছে আরও একটা ঝরন আছে। মাটি ভেদ করে সেখানেও স্বচ্ছ জল বের হয়। এই এলাকায় বর্ষায় একবার ধানের চাষ হয়। হ্রদের জল ব্যবহার করে নানা ধরনের সব্জি চাষ হয়। বনদেবীর কৃপায় ঝরনের জলে মালাবতী জঙ্গল সবসময় সবুজ থাকে। বনের পশুপাখিদের খাবার জলের অভাব হয় না। আমরাও সারা বছর নানা ধরনের সব্জি চাষের কাজে জল পাই। জামবনীর সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়ে ভূগোলের বিভাগীয় প্রধান প্রণব সাউ বলেন, ঝর্ণার জল ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। আবার জঙ্গলের ভিতর কোনও জায়গার জমা জল প্রস্রবণ আকারেও বের হতে পারে। ভূগর্ভ থেকে জল বের হলে স্থানীয় মানুষের পানীয় জলের সমস্যা মিটতে পারে। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন বলে মনে করছি।