• বিভাজনের আগুন জ্বালাচ্ছে বিজেপি, বামেদের ব্রিগেড মঞ্চ থেকে দিল্লি অভিযানের ডাক
    বর্তমান | ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • সোহম কর, কলকাতা: নির্বাচনী রাজনীতিতে আক্ষরিক অর্থেই ‘শূন্য’ একটি দল। সেই দলের চারটি গণসংগঠনের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ। প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল মাস তিনেক আগে। পাহাড় থেকে সাগর, কৃষকের উঠোন থেকে কারখানার গেটে নিবিড় প্রচার। যার ফলশ্রুতিতে রবিবার লাল ঝাণ্ডার ঢেউ ছাপিয়ে গেল ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড। আর সেখান থেকেই আওয়াজ উঠল, দেশজুড়ে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি রুখে দিতে হবে। শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য মজবুত হলে সাম্প্রদায়িক বিভাজন আটকে দেওয়া যায়। ১০০ দিনের কাজের টাকা আদায় করতে দিল্লি অভিযানের ডাকও দেওয়া হল ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে। প্রখর রোদ মাথায় নিয়েই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক বামপন্থী কর্মী-সমর্থক এদিন শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর ও বস্তি উন্নয়ন সমিতির ডাকে হাজির হয়েছিলেন। লাল পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল শহরের পথঘাট। 

    শুধুই কি বিজেপি বিরোধিতা? খেতমজুর ইউনিয়নের নেত্রী তথা এই ব্রিগেডের অন্যতম বক্তা বন্যা টুডু থেকে শুরু করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম তাঁদের ভাষণে সমানভাবে বিঁধলেন তৃণমূলকেও। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘খেলা হবে’ স্লোগানের সূত্র ধরে ‘মাঠে নেমে খেলা’র বার্তা দিয়েছেন তাঁরাও। বন্যা বলেন, ‘ওরা বলছে খেলা হবে। আমরা খেলব। ব্যাট করব। বল করব। ২০২৬-এ আমরাও দেখিয়ে দেব। উইকেট আমরাও ফেলব।’ বন্যা যখন ভাষণে আগুন ঝরাচ্ছেন, বৈশাখের খরবায়ুর সঙ্গে তখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লাল-ব্রিগেডের গর্জন। সমাবেশের মঞ্চে আয়োজক গণসংগঠনগুলির বর্তমান ও প্রাক্তন নেতৃত্বকেই দেখা গিয়েছে মূলত। দর্শকাসনে ছিলেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রর মতো একাধিক বর্ষীয়ান নেতা। উপস্থিত ছিলেন আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্যও।

     প্রথম বক্তব্য রাখতে ওঠেন সিটু রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু। তিনি বলেন, ‘মোদি পুঁজিপতিদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে শ্রমজীবী মানুষের উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছেন। কয়লা, ইস্পাত থেকে শুরু করে সমস্ত জাতীয় সম্পদ দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিয়েছেন। সমানে হিন্দু-মুসলমান করে চলেছে বিজেপি-আরএসএস।’ কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার বলেন, ‘২৭ বছর আগে তেভাগা আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তিতে কৃষকসভা ব্রিগেড সমাবেশ ডেকেছিল। শ্রমিক-কৃষক জোটবন্ধ হলে যে সাম্প্রদায়িকতাকে ঠেকানো যায়, শিখিয়েছিল তেভাগা।’ কেন্দ্রের শ্রম-কোড বাতিলের দাবিতে আগামী ২০ মে দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানান তিনি। বক্তাদের ভাষণে উঠে এসেছে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি থেকে সাম্প্রতিক মুর্শিদাবাদ ইস্যুও। খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক নিরাপদ সর্দার শুরু থেকেই একযোগে আক্রমণ শানান রাজ্য ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। বলেন, ‘মোদি-মমতার আমলে কৃষক আত্মহত্যা বেড়েছে। লোকসভায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না।’ বক্তব্য রাখেন বস্তি উন্নয়ন সমিতির নেতা সুখরঞ্জন দে। 

    বৈশাখী ব্রিগেডে বিপুল জনসমাগম দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বাম নেতৃত্ব। কিন্তু এই জমায়েতের প্রতিফলন কি ভোটবাক্সে পড়বে? ভাষণে বন্যা তার জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ‘ভোট আলাদা। আর মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্ন আলাদা।’ শেষ বক্তা হিসেবে পোডিয়ামে আসেন সেলিম। উঠেই তাঁর ঘোষণা, ‘যাঁরা দূরবীন দিয়ে সিপিএমকে দেখতে পাচ্ছিলেন না, এই সমাবেশ তাঁদের বুকে কাঁপন ধরাবে। দিন পাল্টাচ্ছে। তার আগাম বার্তা আসছে। লাল ঝান্ডা দেড় গজের কোনও কাপড় নয়। চিট ফান্ড, ইলেক্টোরাল বন্ডের টাকায় কেনা নয়। …সরকারের কাজ কী? ট্রাম, ট্রেন, বন্দর, এয়ারপোর্ট, ব্যাঙ্ক চালানো। মোদি বলছেন, ওসব আদানি-আম্বানি চালাবে। আমি মন্দির-ওয়াকফ বোর্ড চালাব। ভোটের সময় বলেছিলে, সব কা সাথ সব কা বিকাশ। এখন সব কা বিনাশ।’ মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসায় নিহত হরগোবিন্দ দাস, চন্দন দাস ও ইজাজ আহমেদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এদিন ব্রিগেডে গণ-অর্থসংগ্রহ করা হয়। 
  • Link to this news (বর্তমান)