• কঙ্গোয় জঙ্গি দমনের সঙ্গেই মানবসেবা, সুপ্রিয়র মুকুটে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সম্মান, উচ্ছ্বসিত মধ্যমগ্রাম
    বর্তমান | ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • শ্যামলেন্দু গোস্বামী, বারাসত: সেই কোথায় আফ্রিকার কঙ্গো। সেখানে গিয়ে বন্দুক হাতে লড়াই করেছেন। বলার মতো বীরত্ব দেখিয়েছিলেন। জঙ্গিরা শহর দখল করতে আসছিল। বুক চিতিয়ে লড়াই করে তাদের আটকেও দিয়েছিলেন। দায়িত্ব ছিল অসহায় মানুষকে শান্তিতে বসবাস করার ব্যবস্থা করে দেওয়ার। সেই কাজ দস্তুরমতো পালন করে রাষ্ট্রসঙ্ঘের পক্ষ থেকে পেয়েছেন ‘পিস কিপিং মেডেল’। এ খবর আগেই চলে এসেছে পরিবারের কাছে। এবার সশরীরে আসছেন সুপ্রিয় জানা। তাঁর আসার অপেক্ষায় গোটা মধ্যমগ্রাম। সুপ্রিয়বাবুর পাশাপাশি ‘পিস কিপিং’ মেডেল পেয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপের বাসিন্দা কাকলি মান্নাও।

    ভারত থেকে ১৬০ জওয়ান গিয়েছিলেন মধ্য আফ্রিকার কঙ্গোতে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশন ‘মনুস্ক’র অংশ হিসেবে বিশেষ দলের সঙ্গে গিয়েছিলেন সুপ্রিয়বাবুও। হোয়াটসঅ্যাপ কলে তিনি বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে জঙ্গিরা গোমায় হামলা চালায়। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শেষ করে দেয়। তছনছ করে দেয় সব কিছু। মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু বেনি শহরের আগে জঙ্গিদের বোকাবতে আমরা রুখে দিয়েছিলাম। এরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মানুষকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। একবছর ধরে এই কাজ করছি আমরা। আমাকে পিস কিপিং মেডেল দেওয়া হয়েছে। বেশ ভালো লাগছে। এর ফলে আমাদের কাজের উৎসাহ আরও বাড়ল। আমরা পরের মাসে দেশে ফিরব।’

    আফ্রিকার কঙ্গোতে মূলত আদি জনজাতিদেরই বসবাস ছিল। পরে সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করে ফরাসিরা। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৬০ সালে ফরাসিদের বিতাড়িত করে স্বাধীন হয় কঙ্গো। তবে দেশটি বহু বৈদেশিক শক্তির টার্গেটে ছিল। কিছু স্বার্থাণ্বেষীর অর্থনৈতিক মদতে একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠী মাথাচাড়া দিতে শুরু করে। দেশের সরকারের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী এম-২৩’র লাগাতার সংঘর্ষ হতে থাকে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে বড় জঙ্গি হামলা। ফল মারাত্মক অনাহার। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, যুদ্ধের নেপথ্যে রয়েছে কঙ্গোর মূল্যবান খনিজ পদার্থ। সেই অতি মূল্যবান সম্পদ দখলে নজর বহু বৈদেশিক শক্তির। তারাই দেশের অভ্যন্তরে অশান্তি পাকিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে কঙ্গোর পাশে দাঁড়ায় রাষ্ট্রসঙ্ঘ। তারা শান্তিদল পাঠায়। তার সদস্য হয়েই কঙ্গোয় যান মধ্যমগ্রামের সুপ্রিয়। এর আগে তাঁর পোস্টিং ছিলেন পঞ্জাবে। 

    সুপ্রিয়বাবুর পরিবারে মা আছেন। রয়েছে স্ত্রী ও এক ছেলে। সে এবছর মাধ্যমিক দিয়েছে। ২০২৪ সালের মে মাসে রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে ভারতের ২১‌ মহিলা সহ মোট ১৬০ জন জওয়ানকে কঙ্গো পাঠানো হয়। সেই দলে ছিলেন সুপ্রিয়।‌ শান্তিরক্ষা মিশনের লক্ষ্য, কঙ্গো সরকারকে সহায়তা প্রদান করে সেদেশের নাগরিকদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা। পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষা। সে কাজ মন দিয়ে পালন করে রাষ্ট্রসঙ্ঘের খেতাব জিতে নিলেন বাংলার সাহসী জওয়ান সুপ্রিয়।
  • Link to this news (বর্তমান)