এই সময়: ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকা কি প্রকাশিত হবে আজ, সোমবার? স্পষ্ট উত্তর মিলল না রবিবার রাতেও।
চাকরিহারা শিক্ষকদের তরফে রাজ্য সরকারকে যে ডেডলাইন দেওয়া হয়েছিল, তা শেষ হচ্ছে আজই। সেই সময়সীমা মেনে কি বেরোবে তালিকা? স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) বা শিক্ষামন্ত্রী, কেউই অবশ্য রবিবার রাত পর্যন্ত বিষয়টা স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি। শিক্ষা দপ্তরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তালিকা প্রস্তুত আছে। কিন্তু আজ তা প্রকাশ করা হবে কি না, সে ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ এখনও মেলেনি উপরমহলের তরফে।
এ দিকে, এই লিস্ট প্রকাশের দাবিকে সামনে রেখেই আজ সল্টলেক করুণাময়ী থেকে বেলা ১২টায় এসএসসি ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। তালিকা না বেরোলে এসএসসি ভবন ঘেরাও করা হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের মঞ্চের তরফে চিন্ময় মণ্ডল রবিবার বলেন, ‘আমরা যোগ্য–অযোগ্যের তালিকা চাইছি। গত ১১ এপ্রিল বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানে জানানো হয় যে ২১ এপ্রিল তালিকা প্রকাশ হবে। সেই লিস্ট বের করতেই হবে। না হলে আমরা এসএসসি ভবন ছাড়ব না।’ ইতিমধ্যেই নানা জেলা থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীরা। অনেকে মহানগরে পৌঁছেও গিয়েছেন।
কেন এই তালিকা প্রকাশকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন চাকরিহারারা? ২০১৬–র এসএসসিতে মোট ২২ লক্ষ পরীক্ষার্থী ছিলেন। এঁদের মধ্যে চাকরি পান প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। কিন্তু ‘যোগ্য’, ‘অযোগ্য’ ভাগাভাগি না হওয়ায় পুরো প্যানেলই বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। চাকরি হারিয়েছেন এত মানুষ। সরকার জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে রিভিউ পিটিশনে যাবে তারা।
চাকরিহারারাও জানান, সুপ্রিম কোর্টে তাঁরা পুনর্বিবেচনা বা রিভিউ পিটিশন করবেন। কিন্তু এ জন্য জরুরি ‘যোগ্য–অযোগ্য’ নির্দিষ্ট করে দেওয়া তালিকা। তা হলে আদালতের কাছে ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা জোরালো ভাবে নিজেদের চাকরির দাবি জানাতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অবশ্য তাঁদের দাবি, এই তালিকার মাধ্যমে চিহ্নিত করে টার্মিনেট করতে হবে ‘অযোগ্য’–দের। ‘যোগ্য’দের সার্টিফায়েড কপি দিতে হবে। যাতে আদালতে চাল এবং কাঁকর আলাদা করা যায়।
গত ১১ এপ্রিলের বৈঠকের পরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ‘আমাদের কাছে যোগ্য–অযোগ্য তালিকা রয়েছে। ২২ লক্ষ ওএমআরের মিরর ইমেজ এবং ওই তালিকা প্রকাশ করতে আমাদের, অর্থাৎ শিক্ষা দপ্তর, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বা এসএসসির কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তা প্রকাশের আগে আমাদের আইনি দিকগুলি নিশ্চিত করতে হবে।’
রবিবার অবশ্য যোগাযোগ করা হলেও ফোন এবং মেসেজের জবাব দেননি ব্রাত্য। এসএসসি–র কর্তারাও এ দিন পর্যন্ত আইনি পরামর্শের কথাই শুনিয়েছেন। কিন্তু তালিকা বেরোবে কি না, সেটা স্পষ্ট করেননি। তবে আইনজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই তালিকা আসলে সিবিআই–এর তৈরি করা। মিরর ইমেজও সিবিআই–এর। এরই ভিত্তিতে কোর্ট ‘যোগ্য–অযোগ্য’ আলাদা করে বুঝতে পারেনি। আইনজ্ঞদের অনেকেই তাই মনে করছেন, যে তালিকা আগেই কোর্টকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি, তা প্রকাশের পরে আইনি লড়াইয়ে চাকরিহারাদের কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।